তোপের দায়িত্ব, দূরে যাওয়ার জো নেই

কাঠ কয়লার গুঁড়ো তেমন মসৃণ হয়নি। আবার বারুদের মশলার পরিমাণটাও কেমন বেশি বেশি ঠেকছে! বসে থেকে ছেলেকে বুঝিয়ে দিলেন। আবার কেঁচে গণ্ডুষ।

Advertisement

সমীর দত্ত 

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২২
Share:

সেই তোপ। নিজস্ব চিত্র

হাঁ-হাঁ করে উঠলেন পবন লোহার!

Advertisement

কাঠ কয়লার গুঁড়ো তেমন মসৃণ হয়নি। আবার বারুদের মশলার পরিমাণটাও কেমন বেশি বেশি ঠেকছে! বসে থেকে ছেলেকে বুঝিয়ে দিলেন। আবার কেঁচে গণ্ডুষ। বারুদের মশলা যত্ন করে মেশানো হল কাঠকয়লার গুঁড়োর সঙ্গে। দু’আঙুলে এক চিমটে তুলে নিয়ে পরখ করে হাসি খেলে গেল ছোটখাট চেহারার বৃদ্ধের মুখে।

মানবাজার ১ ব্লকের পাথরমহড়া গ্রামে রাজবাড়ির কাছেই পবন লোহারের মাটির বাড়ি। রাজবাড়ির তোপধ্বনি এখনও নির্ঘণ্ট বলে দেয়। কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসছে এমনটা। আর বংশানুক্রমিক ভাবে তোপ দাগার দায়িত্ব এসেছে পবন লোহারের হাতে। ইদানীং কানে একটু খাট হয়েছেন। চোখেও জোর কমছে। বড় ছেলে বাপিকে তালিম দিচ্ছেন ভাল করে। তোপ মানে মোটা পাতের এক মুখ খোলা লোহার নল। বাপি বলেন, ‘‘বারুদ আর কাঠ কয়লার গুঁড়ো সমান সমান নিয়ে, জলে ভিজিয়ে গুলি পাকাতে হয়। সেটা রোদে শুকিয়ে, ভেঙে, তোপের মধ্যে ঢোকাতে হয়। তাড়াহুড়ো একেবারেই চলবে না।’’

Advertisement

গড় পাথরমহড়া রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা জানান, রাজার অধীনে থাকা যে সব জায়গায় পুজো হত, তাঁরা যাতে রাজবাড়ির সময় সারণি মানতে পারেন, সেই কথা ভেবে তোপ দাগা হত। রাজপাট নেই। আচারটা রয়ে গিয়েছে। পাথরমহড়া রাজবাড়ির পুজোয় সব মিলিয়ে ৮টি তোপ দাগা হয়। ষষ্ঠীর দিন পুজো শুরু হওয়ার আগে প্রথম। সপ্তমীর দিন সকালে রাজবাড়ি থেকে দোলা বার হওয়া এবং পুকুর থেকে ফিরে আসার সময়ে আবার। অষ্টমীর দিনে তিন বার। আবার দশমীর দিন বিসর্জনের দোলা বেরনো এবং ফিরে আসার সময়ে তোপধ্বনি হয়।

রাজবাড়ির প্রবীণ সদস্য দেবাশিস নারায়ণ দেব বলেন, ‘‘শুনেছি, আগে পুজোয় তোপের খরচ সামাল দেওয়ার জন্যে জমি দান করা হয়েছিল। এখন ওই খরচ আমরাই মেটাই।’’ পবনবাবু বলেন, ‘‘অনেক পুরুষ ধরে আমরা এই দায়িত্ব সামলে আসছি। পুজোর ক’টা দিন তাই আত্মীয়-বাড়িও যেতে পারি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement