বাজার জমল কই, আক্ষেপ বিক্রেতার

ঠিক উল্টো সুর সিউড়ির প্রতিষ্টিত বস্ত্র ব্যবসায়ী সোমনাথ দাসের। তিনি বলছেন, ‘‘গতবারের তুলনায় এ বার বাজার ভাল নয়। তার জন্য জিএসটি থেকে নোট বাতিল সবই দায়ী। তবে মফস্সলে অনলাইন কেনাকাটা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলেনি।’’

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:১০
Share:

পুজোর আগে শেষ রবিবারে ভিড় বোলপুরের এক দোকানে। নিজস্ব চিত্র

শহরের শপিং মলের হাতছানি। অনলাইন কেনাকাটি। জিএসটি নিয়ে ধন্দ। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি। তার মধ্যেই চলে এল পুজো। রবিবার পর্যন্ত পুজোয় কেটাকাটা কেমন হল, তার উত্তরে খুব একটা আশার কথা শোনাননি বীরভূমের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। পুজোর আগে শেষ রবিবারেরও ছবিটা কী পাল্টাল?

Advertisement

উত্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে জেলার ব্যবসায়ীদের থেকে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। শেষ রবিবার বলে আগের মতো উপচে পড়া ভিড় এখন আর হয় না। তবে বাজার মোটের উপর খারাপ নয়। গোটা মরসুমের
নিরিখে বেশ ভালই কেনাকাটা হয়েছে। আরের পক্ষের কথায়, বাজারে বেশ ডামাডোল। গত বারের তুলনায় অবশ্যই বাজার খারাপ। নোট বাতিল, জিএসটি, বৃষ্টি এবং শপিং মল— সবই মিলিত ভাবে দায়ি বলে এই অংশের বক্তব্য।

এর মধ্যেই পুজোর আগে শেষ রবিবার কেনাকাটায় তেমন ভিড় নজরে পড়েনি। দুবরাজপুরের একটি রেডিমেড পোশাকের ব্যবসায়ী শামিম নওয়াজ বলছেন, ‘‘বাজার কিন্তু ভালই। বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটার ধুম বাড়লেও কাপড়ের মান, রং বুঝে এবং ট্রায়াল দিয়ে কিনতে হলে দোকান থেকে কেনাই শ্রেয় বলে মনে করেন বেশির ভাগ খদ্দের। তবে জিএসটি নিয়ে কিছু ধন্দ থাকলেও সেটা খুব বেশি পার্থক্য গড়ে দেয়নি।’’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ ক্ষেত্রে শর্ত একটাই: ক্রেতার পছন্দ মতো ব্রান্ডেড পোশাক রাখতে হবে। প্রায় এক বক্তব্য নলহাটির বস্ত্র ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ শর্মারও।

Advertisement

ঠিক উল্টো সুর সিউড়ির প্রতিষ্টিত বস্ত্র ব্যবসায়ী সোমনাথ দাসের। তিনি বলছেন, ‘‘গতবারের তুলনায় এ বার বাজার ভাল নয়। তার জন্য জিএসটি থেকে নোট বাতিল সবই দায়ী। তবে মফস্সলে অনলাইন কেনাকাটা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলেনি।’’ বোলপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী নিমাইচন্দ্র সাহা আবার বাজার খারাপের জন্য বর্ধমান, আসানসোল-দুর্গাপুর এবং কলকাতার বড় বড় শপিং মলে কেনাকাটাকে দায়ি করছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এক ছাদের তলায় গিয়ে এক সঙ্গে নানা সম্ভার ক্রেতাদের বাইরে বাজার করতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

দুবরাজপুরের গৃহবধূ অনিন্দিতা গরাই বা রামপুরহাটের নাচের শিক্ষকা সঙ্গীতা চক্রবর্তীদের সঙ্গে কথা বলেও তার আঁচ মিলল। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাইরে শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটাও করেছি। আবার এলাকার বাজারেও কেনাকাটা করেছি। তবে অনলাইনে কাপড় কেনায় বেশ ঝুঁকি। কেননা এইচডি স্ক্রিনে ঝকঝকে শাড়িটাই বাড়িতে আসার পর কেমন ফ্যাকাসে মনে হয়। তা ছাড়া অন্য ড্রেসের সাইজ ও কাপড়ের খুব ভাল করে বোঝার উপায় নেই।’’ বোলপুরের কাবেরী দাস এবং সিউড়ির রঞ্জনা অধিকারীরা বলছেন, ‘‘এ বার মহিলাদের ফ্যাশনে এগিয়ে হ্যান্ডলুম, তসর, খাদি কটন, লিলেন, জামদানি মধুবনি এবং সিল্ক। জেলার বাজারেও সে সব শাড়ি মিলেছে।’’

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ছেলেদের বেশির ভাগের পছন্দ নানা ধরনের জিন্স, কটনের প্যান্ট এবং টি-শার্ট, শার্ট। মেয়েদের রেডিমেড পোশাকের ফ্যাশন ট্রেন্ডে উপরের দিকে বাজিরাও মাস্তানি, বাহুবলি থাকলেও কুর্তি, লেহেঙ্গা সুতির পোশাকের চাহিদা এ বারও জেলার বাজারে যথেষ্ট। রামপুরহাটের কজেল পড়ুয়া শ্রীলেখা দাস, সিউড়ির সুতপা মজুমদারও মানছেন, বাইরে গিয়ে বাজার করার হিড়িক বেড়েছে। তবে তাঁরা সিউড়ি ও রামপুরহাটের বাজার থেকেও কেনাকাটা করেছেন। রবিবার ছিল যার শেষ পর্ব।

তবে ক্রেতাদের কেউ জিএসটি নিয়ে অভিযোগ বা মাথা না ঘামালেও ব্যবসায়ীদের অনেকেই সমস্যায় কথা জানাচ্ছেন। নলহাটির বস্ত্র ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ শর্মা যেমন বলছেন, ‘‘আমাদের পাকা বিলে পোশাক কিনতে হলেও খদ্দেরদের কাছ থেকে সেটা নেওয়া যায়নি শুধু পরিকাঠামোগত অসুবিধার জন্যই। জেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।’’ এক মত রামপুরহাট বস্ত্র ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক শরিফ হোসেনও। তিনি বলছেন, ‘‘জিএসটি নিয়ে সত্যিই সমস্যায় পড়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন