জোটের মিছিলের পাল্টা

তিন মন্ত্রীকে এনে জনসভা তৃণমূলের

প্রথম দফার ভোট দেখিয়ে দিয়েছে ভূতের নেত্য কমেছে। বিরোধী শিবির পর্যন্ত বলছে, কমিশনের দাওয়াইয়ে লোকসভা ভোটের তুলনায় দুধে জল মিশেছে কম। বীরভূমের বাম-কংগ্রেস নেতাদের আবার আশা বাড়িয়ে দিয়েছে ইলামবাজার, নানুরে সফল দলীয় কর্মসূচি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইলামবাজার ও মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

প্রথম দফার ভোট দেখিয়ে দিয়েছে ভূতের নেত্য কমেছে। বিরোধী শিবির পর্যন্ত বলছে, কমিশনের দাওয়াইয়ে লোকসভা ভোটের তুলনায় দুধে জল মিশেছে কম। বীরভূমের বাম-কংগ্রেস নেতাদের আবার আশা বাড়িয়ে দিয়েছে ইলামবাজার, নানুরে সফল দলীয় কর্মসূচি। দু’টি এলাকাতেই দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা কার্যালয় খুলতে পারা, মিছিল করা অক্সিজেন জুগিয়েছে নিচু তলার কর্মীদেরও।

Advertisement

এই আবহে তিন বিদায়ী মন্ত্রীকে হাজির করিয়ে জনসভা করল তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিনের সভাও হল সেই ইলামবাজারে। লাইব্রেরি মাঠে নির্ধারিত সূচি মেনে, দুপুর তিনটে নাগাদ ইলামবাজার লাইব্রেরি মাঠে জনসভা শুরু হয়। বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সমর্থনে সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্লক নেতারাও। মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং লাগোয়া মঙ্গলকোট আসনের দলীয় প্রার্থী সিদ্দিকুলা চৌধুরী।

সভামঞ্চ থেকে বিরোধী জোটকে কটাক্ষ, বিদ্রুপ করেন ওই বক্তারা। আগুনে রোদ উপেক্ষা করে ঢাক-ঢোল, ব্যান্ডপার্টি, আদিবাসীদের নাচের দল নিয়ে এক এক করে অঞ্চল থেকে কর্মী-সমর্থকদের মাঠে ভিড় করতে দেখে ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, ‘‘বিরোধী নেতারা এই জমায়েতের দশ শতাংশ ভিড় করে দেখান!’’ গোয়েন্দা ও পুলিশ রিপোর্ট বলছে, এই সভায় হাজার সাতেকের কিছু বেশি লোক জমায়েত হয়েছিল। বিরোধীদের দাবি, সংখ্যাটা অনেক কম।

Advertisement

উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং লোকসভা ভোটের সময়ে জেলায় সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটে একটি মাত্র জেলা পরিষদের আসন ছাড়া সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল। একই ভাবে লোকসভা ভোটের সময়ে বোলপুর বিধানসভা এলাকার একাধিক জায়গায় রিগিংয়ের করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। গত পাঁচ বছরে জেলার কিছু জায়গায় তেমন কোনও কর্মসূচিও করতে পারেনি বিরোধীরা।

সেই ইলামবাজারেই জোট প্রার্থী তপন হোড়ের প্রচারে পা মিলিয়েছিলেন হাজার খানেকের কিছু বেশি মানুষ। তৃণমূল সূত্রের খবর, জোটের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিল শাসক শিবির। এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘এই অবস্থায় সকলকে এক জায়গায় করে প্রচারে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না।’’ বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়াই তিন মন্ত্রীকে একসঙ্গে হাজির করেছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি।

এ দিনের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদায়ী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সেই জোটকে ‘শিয়াল-ছাগলের’ সঙ্গে তুলনা করে কটাক্ষ করেন। আবার কখনও রাহুল গাঁধী, মানস ভুঁইয়া, সৌমেন মিত্রদের প্রসঙ্গ টেনে পাগল বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন। সংখ্যালঘুদের মন পেতে আবার হাজির ছিলেন মঙ্গলকোটের প্রার্থী সিদ্দিকুলা চৌধুরী। তেমন আদিবাসীদের দলে টানতে হাজির ছিলেন মন্ত্রী সুকুমারবাবু। গত পাঁচ বছরে বাংলার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর আর্জি জানান সকলে। বিরোধী জোটের পক্ষে এলাকার প্রার্থী আরএসপি-র তপন হোড়ের দাবি, ‘‘আর যাক হোক, তৃণমূলের মুখে ভোট চাওয়া আর মানায় না!’’

অন্য দিকে, মাড়গ্রামের সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দাবি করলেন, ‘‘তৃণমূল জঙ্গলমহলের দু’শো থেকে আড়াইশো বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি।’’ হাঁসন বিধানসভার কংগ্রেস প্রার্থী মিলটন রশিদ এর সমর্থনে বুধবার মাড়গ্রামের ধূলফেলা মোড় সংলগ্ন মাঠে জনসভায় করেন অধীর। তৃণমূল নেতাদের উন্নয়নের ফিরিস্তিকেও এক হাত নেন তিনি। মাড়গ্রাম এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস বেশি। অনেকের মতে, সে কথা মাথায় রেখেই অধীর সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

অধীর হাঁসনের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের নাম না উল্লেখ করে বলেন, ‘‘মাড়গ্রামের ঘরের ছেলে মিলটন। এই মাড়গ্রামে অনেকে উড়ে এসে বলেন আমি ঘরের ছেলে।’’ এরপরেই প্রদেশ সভাপতির প্রশ্ন, কাকে ভোট দেবেন আপনারা? চড়া রোদ মাথায় নিয়েও করে অধীরের সভায় প্রায় দশ হাজারের বেশি লোক হাজির হন। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিএম দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য গোকুল ঘোষ, সঞ্জীব বর্মণ, ফরওয়ার্ড ব্লক দলের জেলা কমিটির সদস্য নিতাই মাল, আরসিপিআই দলের নেতৃত্বও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন