বাড়ির বাইরে। ফাইল ছবি
পুরুলিয়া শহরে অবাঙালি ব্যবসায়ী দম্পতি খুনের ঘটনায় তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল জেলা সদরের নীলকুঠিডাঙার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল রামশঙ্কর কোঠারি ও সুশীলা কোঠারির রক্তাক্ত দেহ। ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল জেলা। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন বলে জানান মামলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি রায়। আজ, শুক্রবার সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা।
সরকারি আইনজীবী জানান, ওই দম্পতির ছেলে সুনীল দিল্লিতে থাকেন। ফোনে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। ২৮ এপ্রিল বাড়ির ল্যান্ডলাইন বেজে যাচ্ছিল। মোবাইলে ফোন করলেও কেউ ধরছিলেন না। সন্দেহ হয় সুনীলের। যোগাযোগ করেন এক বন্ধুর সঙ্গে। দেখা যায়, ঘরের দরজা বন্ধ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘর থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। সুনীলের ওই বন্ধুই অভিযোগ দায়ের করেন থানায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে দম্পতির ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি ব্যাঙ্কের চিরকুট। সেই সূত্রের উপরে ভিত্তি করেই তদন্তের জাল ছড়ানো হয়। গ্রেফতার করা হয় পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা বিজয় আগরওয়ালকে। তাঁকে জেরা করে নাগাল পাওয়া যায় অন্য দু’জনের। পুলিশের দাবি, বিনীত আগরওয়াল ওরফে নিশু এবং ধীরাজ আগরওয়াল ওরফে লালা নামের ওই দু’জন সুপারি কিলার। তারা খুনে বিজয়কে সাহায্য করেছিল। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘খুনের ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এমনই তথ্য-প্রমাণ পুলিশ সংগ্রহ করেছিল, যে অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা তাদের কাছে খোলা ছিল না।’’
কেন খুন? মামলায় সুনীলের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ চট্টরাজ জানান, রামশঙ্কর কোঠারির একটি গয়নার দোকান ছিল মধ্যবাজারে। পাশাপাশি তেজারতি কারবারও করতেন। মামলার মূল অভিযুক্ত বিজয় আগরওয়াল সোনা বন্ধক রেখে তাঁর থেকে প্রায় ষাট লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। টাকা ফেরতের জন্য একটা সময়ে রামশঙ্করবাবু বিজয়কে চাপ দিতে শুরু করেন। তার থেকেই খুনের ফন্দি আঁটা শুরু হয় বলে দাবি।
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, বিজয় রামশঙ্করবাবুকে টাকা শোধ দিতে বাড়িতে আসবে বলে খবর দেয়। ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় হাজির হয় সে। সঙ্গে ছিল দু’জন ভাড়াটে খুনি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘খুন করার জন্য বিজয় দিল্লি থেকে দু’জনকে নিয়ে এসেছিল।’’ তিনি জানান, পরে পুলিশ দিল্লি থেকেই তাদের গ্রেফতার করে আনে।
পার্থসারথিবাবু জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে একটি গাড়ি ওই দম্পতির বাড়ির দরজায় অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেরিয়ে যায়। এলাকার এক জন সেটা দেখেছিলেন। রহস্যজনক গাড়িটির সূত্র ধরেই ঘটনার অনেক তথ্য উঠে আসে। পরে গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। শহরের সাহেব বাঁধের কাছে খুনে ব্যবহৃত দু’টি ছুরিও ধৃতদের জেরা করে উদ্ধার করা হয়।
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, গ্রেফতারের পরে মামলায় ধৃত তিন জন জেলেই রয়েছে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও তাদের জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে। এ দিন বিচারক বিজয়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় এবং অন্য দু’জনকে ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন।