বোলপুর কেন্দ্রের তিন মহারথী। — বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় বেলা এগারোটা। কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে মার্জিনের হিসেব কষছেন। কোন বুথে কত লিড!
নিজে কর্মীদের প্রশ্ন করলেও, মুখে বিশ্বজয়ের ভাব। সেই জন্য প্রশ্ন করতেই, তেড়েফুঁড়ে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘‘এটা চন্দ্রনাথ সিংহ, ৫০ হাজার ভোটে জিতছি, ৫০ হাজার! জেলায় সব থেকে বেশি মার্জিনে জিতব আমিই।’’ আড়ালে অবশ্য তাঁর কর্মীরাই মুচকি হেসে বলছেন, “দেখা যাক কি হয়? অপেক্ষাই ভিলেন!”
বোলপুর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে বসে এই ভাবেই সময় কাটছে রাজ্যের বিদায়ী মৎস্যমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহের। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেকেরা জানাচ্ছেন, টেনশন কাটাতে দাদা ইতিমধ্যেই অন্যান্য জেলায় ভোটের প্রচারে গিয়েছেন। শেষ দফা ভোটের পর, নিজের এলাকায় ফিরেছেন। এখানেও কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছেন না। নিজের আঁককষা তো আছেই, টেনশন থেকে রিলিফ পেতে, আবার জেলার অন্য বিধানসভা এলাকায় গিয়ে দলীয় নেতৃত্ব এবং কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ঘুম গিয়েছে উড়ে।
জেলায় দলের কার্যকরী সভাপতি হওয়ার সুবাদে, অন্যান্য আসনে ‘দলের হিসেব’ এবং ‘গ্রাউন্ড রিয়েলিটি’ নিয়ে আঁককষাও চলছে।
টেনশন কাটাতে চলছে, ছেলেদের পঠন পাঠন নিয়ে বসাও। আবার কখন বন্ধু, আত্মীয় পরিবারকে সময় দিচ্ছেন।
এদিকে, ‘ভোটাররা নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন’ উক্তি আউড়ে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে ভোট হয়েছে দাবি জানালেও, সেই অর্থে কিন্তু স্বস্তিতে নেই চার বারের প্রাক্তন বাম বিধায়ক আরএসপি প্রার্থী তপন হোড়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ভোটের পর ফলাফলের জন্য অতীতেও অপেক্ষা করেছি। কাজেই এটা কোনও বিষয় নয়।’’
কোনও টেনশনই কি নেই?
ষাট ছুঁইছুঁই পোড় খাওয়া প্রাক্তন বাম বিধায়কের জবাব, ‘‘টেনশন থাকতো, মানুষ যদি নিজের ভোট নিজে না দিত।’’ তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সৌজন্যে ভোট পক্রিয়া যেমনটা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। রাজ্যে অতীতের প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং জোট ভোট পেয়ে ক্ষমতায় ছিলেন।
কিন্তু এই সাড়ে চার বছর তৃণমূল যা করেছে, তাতে ওই ‘অ্যাচিভমেন্ট’ ধরে রাখতে পারবে না। বাম ও কংগ্রেস আসন বোঝাপড়া করেছে। স্বাভাবিক কারণেই দলীয় নেতা কর্মী সমর্থক এবং অনুগামীদের মতই প্রকাশ্যে জেতা নিয়ে কোনও রকমের আশঙ্কা নেই বলেই জানান তিনি।
তবে এলাকার বাম ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য বলছে অন্য কথা। নাকি চিন্তায় ঘুমই কমে গিয়েছে তাঁর!
তাঁদের উপলব্ধি, ভোটের মাস খানেক আগে যে ভাবে জোটের অনুকূল হাওয়া ছিল, কম করে ৪০ হাজারের কিছু বেশি ভোটেই জেতা এক রকমের নিশ্চিত ছিল জোট প্রার্থীর। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে, এলাকা ধরে ধরে শাসক শিবির ‘রিকভারি’ করেছে। ফলে ততটা নিশ্চিত হতে পারছেন না তপনবাবু। তাঁর অনুগামীদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, ‘‘কোনও আশঙ্কা নেই বলে, মুখে যতই বলুন না কেন, দাদা কিন্তু স্বস্তিতে নেই।’’ আর তাই টেনশন কাটিয়ে, স্বস্তি পেতে মানুষের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে এখন বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি। আরএসপি দলীয় কার্যালয়ে বোলপুরে ক্রান্তিভবনে তাই বেশির ভাগ সময় কাটছে তপনবাবুর। মুখে অবশ্য তিনি বলেন, “আমার কোনও আকুলি বিকুলি নেই। তবে অপশাসন হটাতে মানুষ বেরিয়েছেন। এর পরেও যদি আমরাই হারি, তবে বুঝব মানুষ চায়নি।”
বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি কোনও ফ্যাক্টর নেই বলে শাসক তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস জোট দাবি করলেও, দু’য়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফায়দা লুঠতে চাইছে বিজেপি। অন্দরের খবর, ভোট ফুরোলেও ঘুম নেই প্রার্থীর চোখে!
বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি যখন ফলাফল নিয়েও আশাবাদী। গত ৩৯ বছর মানুষ সব দেখেছেন। তা সত্বেও, জয়ী হব নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’’