কংগ্রেসের হাত থেকে পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিতে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
কয়েকদিন আগে বাঘমুণ্ডি ব্লকের মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে আস্থা ভোট হয়। সেখানে তৃণমূল সিপিএমের সমর্থন নেয় বলেই কংগ্রেসের অভিযোগ। যদিও প্রশাসন জানাচ্ছে, ভোটাভুটি হলেও বিষয়টি নিয়ে মামলা থাকায় ফল প্রকাশ করা হয়নি।
২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঘমুণ্ডি বিধানসভা এলাকার বাঘমুণ্ডি ও ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস দখল করে। এক সময় এই এলাকা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও গত কয়েক বছরে ঝালদায় তৃণমূল একে একে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে। এক বছর আগে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যকে টেনে এনে তৃণমূল ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে। কয়েকটি পঞ্চায়েতও একই কৌশলে শাসকদলের দখলে আসে। সে ভাবেই মাঠা পঞ্চায়েতও দখল করতে চায় তৃণমূল।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাঠা পঞ্চায়েতের মোট ৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পায় ৩টি, সিপিএম ২টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ২টি এবং তৃণমূল ১টি আসন। প্রধানের পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় সিপিএমের শিবানী মান্ডি প্রধান হন। তাঁকে সমর্থন করে কংগ্রেস। পরে তিনি সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে যুব তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঘমুণ্ডির সভায় শিবানীদেবী তৃণমূলে যোগ দেন। পরে তাঁকে দলবিরোধী কাজে তৃণমূল সাসপেন্ড করে। তখন তিনি কংগ্রেসে ফিরে যান। পরবর্তীকালে ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই সদস্য ও কংগ্রেসের এক সদস্য তৃণমূলে যান। সব মিলিয়ে তৃণমূলের শক্তি বেড়ে হয় ৪। মোট সদস্যের মধ্যে দলেরই অর্ধেক সদস্য হওয়ায় তৃণমূল থেকে প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়।
তৃণমূলের মাঠা অঞ্চল সভাপতি গৌতম গড়াইয়ের দাবি, ‘‘প্রধান এবং উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে আমাদের চারজন এবং সিপিএমের এক সদস্য ভোট দেন। বিডিও ফলাফল না জানালেও অনাস্থার ভোটাভুটিতে দু’জনেই হেরেছেন।’’ অন্যদিকে কংগ্রেসের বাঘমুণ্ডি ব্লক সভাপতি বিভূতি মাহাতোর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত বিধি মোতাবেক যদি কোনও সদস্য উপযুক্ত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হতে পারে। তৃণমূলের দুই সদস্য পরপর তিনটির বেশি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের সদস্যপদ খারিজ করতে পঞ্চায়েত ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই তৃণমূলের এই দুই সদস্যের ভোটাধিকারই নেই।’’ তিনি জানান, এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। হাইকোর্টেও তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন।
বিভূতিবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল মুখে সিপিএম বিরোধিতার কথা বললেও ক্ষমতা দখলের জন্য সেই সিপিএমকেই সঙ্গে নিয়েছে ওরা।’’ যদিও তৃণমূলের মাঠা অঞ্চল সভাপতির দাবি, ‘‘সিপিএম সদ্য উন্নয়নের স্বার্থে বাইরে থেকে আমাদের সমর্থন করেছেন।’’ যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ভোটাভুটিতে তৃণমূলকে সমর্থন করছেন, এটা মেনে নেব না। ওই সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বাঘমুণ্ডির বিডিও অভিষেক বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটি হয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা থাকায় ফলাফল আমরা প্রকাশ করছি না। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মোতাবেক পদক্ষেপ করা হবে।’’