খয়রাশোলে দায়িত্বে কে, ভাবছে তৃণমূল

দলের অন্দরমহলের খবর, শনিবারই এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে অলোচনায় বসেছিলেন দুবরাজপুরের  বিধায়ক নরেশ বাউড়ি। তা ছাড়া বিভিন্ন নাম নিয়ে প্রতি দিনই আলোচনা, যুক্তিতর্ক চলছেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

খয়রাশোলে আততায়ীর হানায় নিহত তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষের স্থালাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। সঙ্গে উঠছে প্রশ্নও, নেতৃত্বহীনতায় ভূগবে না তো খয়রাশোল?

Advertisement

এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একই মন্তব্য— ‘‘দল যাঁকে উপযুক্ত মনে করবেন তিনি-ই ওই চেয়ারে বসবেন।’’ দলের অন্দরমহলের খবর, শনিবারই এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে অলোচনায় বসেছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউড়ি। তা ছাড়া বিভিন্ন নাম নিয়ে প্রতি দিনই আলোচনা, যুক্তিতর্ক চলছেই।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপকবাবুর মৃত্যুর পরেই খয়রাশোলের দায়িত্ব কার হাতে যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে। সেখানে ব্লকের শীর্ষ নেতারা ছিলেনই, ছিলেন ১০ গ্রাম পঞ্চায়েত বা অঞ্চলের সভাপতিরাও। দলের অন্দরের খবর, সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নাম উঠে এসেছিল। তিনি দীপকবাবুর ভাইপো বিশ্বজিৎ ঘোষ। দলের দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী ছিলেন না না বিশ্বজিৎবাবু। কিন্তু এতে তাঁর পরিবার, বিশেষ করে তাঁর মায়ের প্রবল আপত্তি রয়েছে বলেই খবর। কারণ বিশ্বজিৎবাবুর বাবা খয়রাশোলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ এবং কাকা দীপক ঘোষ, দু’জনেই আততাতীয় গুলিতে খুন হন। পরিবারের আপত্তির কারণ সেটাই।

Advertisement

খয়ারোশোলের তৃণমূল নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, দীপকবাবু কয়েক জন নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। সেই তালিকায় রয়েছে স্বপন সেনের নাম। কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, স্বপনবাবুর নাম নিয়ে দলেই আপত্তির অবকাশ রয়েছে। বিরোধী শিবির তাঁকে মানবে কি না, সেই প্রশ্নও থাকছে।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে ব্লক সভাপতি ছিলেন সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে ২০০৭ সালে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হন অশোক মুখোপাধ্যায়। তখনও এলাকার দাপুটে নেতা অশোক ঘোষ ছিলেন কংগ্রেসে। প্রচুর লোকবল ছিল তাঁর। শতাব্দী রায় ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরে প্রথমে তাঁকে সমর্থন ও পরে সরাসরি তৃণমূলে যোগ দিলে খয়রাশোলের তৃণমূলে দুই অশোকের সংঘাত শুরু হয়। সংঘাত ছিল ক্ষমতা দখলে রাখার। খয়রাশোলের বিপুল কয়লা সাম্রাজ্যের রাশ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখারও।

দলের নেতাদের একাংশ জানান, ২০১১ সালের পরে অশোক ঘোষকে ব্লক সভাপতি করার পরে সেই সংঘাত আরও বাড়ে। অনুব্রতের বিরোধী শিবিরের লোক ছিলেন বলে ২০১৩ সালে অশোক মুখোপাধ্যায়কে ফের ব্লক সভাপতির পদে আনা হলেও দ্বন্দ্ব মেটেনি। ২০১৩ সালেই আততায়ী হামলায় দাদার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন দীপক। তাঁর দাদার মৃত্যুর জন্য আঙুল উঠেছিল অশোক মুখোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের দিকেই।

ক্ষমতার বৃত্ত থেকে দীপকবাবুকে সরতে হয়েছিল এক বারই। একবছরের মাথায় অশোক মুখোপাধ্যায় খুনের পরে। অভিযুক্তের তালিকায় ছিলেন দীপক ঘোষ ও তাঁর অনুগামীরা। তখন খয়রাশোলে নেতৃত্ব সংঙ্কট দেখা দিয়েছিল। নেতারা জানান, পাঁচ জনের একটি কমিটি করে কাজ চালানো হচ্ছিল। দীপকবাবু জামিন পাওয়ার পরে ফের নিজের জায়গা ফিরে পেতে শুরু করেন।

তৃণমূলের কেউ কেউ মনে করছেন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিবেচিত হতে পারে সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। বা ফের পাঁচ জনের কমিটি গড়ে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

আরও একটি সম্ভাবনার কথা উঠছে। দীপকবাবুকে ব্লক সভাপতি করার পাশাপাশি দু’জন কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছিল। এক জন প্রয়াত অশোক মুখোপাধ্যায়ের ভাই রজত মুখোপাধ্যায়। অন্য জন উজ্জ্বল হক কাদেরী। রজতবাবু এক সময় দীপকবাবুর বিরোধী শিবিরে থাকলেও তা এখন অতীত। তবে রজতবাবু নাম নিয়ে আলোচনা হয়নি। উজ্জ্বল হক কাদেরীর সঙ্গে দীপকবাবুর বিরোধ শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। দলের অন্দরমহলের খবর, ওই নেতাকে না জড়ালেও নিহত দীপকবাবুর স্ত্রী যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাতে উজ্জ্বলবাবুর দুই ভাইয়ের নাম রয়েছে। কিন্তু তার পরেও খয়রাশোল চালাতে উজ্জ্বলবাবুর উপর দল ভরসা রাখবে না তো দল, আলোচনা চলছে তা নিয়েও।

খয়রাশোলের বিষয়ে কী বলছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব?

জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই দল সিদ্ধান্ত নেবে। ১১ নভেম্বর জেলা কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে এই বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন