নানুরে গুলি, জখম তৃণমূল কর্মী

গুলির লড়াইয়ে ফের তেতে উঠল নানুর। চণ্ডীপুর গ্রামে গুলিবিদ্ধ হলেন এক তৃণমূল কর্মী। আহত আরও পাঁচজন। তাঁদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

গুলিবিদ্ধ মুকুল মোল্লা। বোলপুরে। (ইনসেটে) নানুরে টহল। নিজস্ব চিত্র

গুলির লড়াইয়ে ফের তেতে উঠল নানুর। চণ্ডীপুর গ্রামে গুলিবিদ্ধ হলেন এক তৃণমূল কর্মী। আহত আরও পাঁচজন। তাঁদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

Advertisement

বিরোধীদের দাবি, এলাকার কর্তৃত্ব কায়েমকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষেই গুলি চলেছে। এমনিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ ওই গ্রামে নতুন ঘটনা নয়। তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এর আগেও একাধিকবার এলাকার দখল হাতে রাখাকে কেন্দ্র করে এলাকার দুই নেতা হোসেন শেখ এবং আনারুল শেখের অনুগামীদের মধ্যে বিবাদের কারণে চণ্ডীপুর গ্রাম তেতে উঠছে। দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই গোলাগুলি, বাড়িতে আগুন লাগানো, লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় রাজনীতিতে আনারুল বীরভূম জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি গদাধর হাজরার অনুগামী হিসাবে পরিচিত। অন্য দিকে হোসেন এক সময় দলের প্রাক্তন যুব নেতা এবং গদাধর-বিরোধী কাজল শেখের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের পরে কাজল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের অনুগামীদের একটি গোষ্ঠী চণ্ডীপুরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হোসেন শেখ ওই গোষ্ঠীতেই নাম লেখান বলে দলীয় সূত্রের খবর। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সুব্রতবাবুর অনুগামীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট বড়া-সাওতা গ্রাম পঞ্চায়েতের টিকিট দেওয়া হয় আনারুলকে। বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে না পারায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেও যান আনারুল। এর পরেই দু’পক্ষের বিবাদ প্রকাশ্যে এসে পড়ে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন সংক্রান্ত রায় ঘোষণার পরে বিজয় মিছিল করাকে ঘিরেও দু’পক্ষের বোমাবাজি হয়। এক হোসেন অনুগামীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আনারুল অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তার পরেই দুই শিবিরের বেশ কয়েক জন গ্রামছাড়া হয়ে যান। সম্প্রতি আগে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থ্যতায় তাঁদের গ্রামে ফেরানো হলেও সংঘর্ষ থামেনি। পাল্টা আনারুল শেখের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হোসেন অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ফের দু’পক্ষের কয়েক জন গ্রামছাড়া হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রুস্তম শেখ নামে এক আনারুল অনুগামীর অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু হয়। তাঁর সৎকারে যোগ দিতে গ্রামছাড়া আনারুল অনুগামীরা শনিবার সকালে ফিরে আসেন। সৎকার হয়ে যাওয়ার পরে রাত ৮ নাগাদ তাঁদের উপরে হোসেন অনুগামীরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। ফের গোলাগুলিতে তেতে ওঠে গ্রাম। মুকুল মোল্লা নামে এক আনারুল অনুগামীর পায়ে গুলি লাগে। একই পক্ষের আরও পাঁচ জন আহত হন। তাঁদের শরীরে রড ও ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। রাতেই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রবিবারও সকাল থেকে গ্রামে পুলিশি টহল চলছে।

তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, আনারুল এক সময় সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এক তৃণমূলকর্মী খুনের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর দাপটেই এক সময় দিনের পর দিন গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকতে হয় তৃণমূল কর্মীদের। রাজ্যে পালা বদলের পরে এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যান হোসেন ও তাঁর অনুগামীদের হাতে। হৃতক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য গত বিধানসভা ভোটের পরে আনারুল গদাধর হাজারার হাত ধরে তৃণমূলে ঢোকেন। তাঁর সঙ্গেই ঢোকেন সিপিএমের আরও কিছু কর্মী-সমর্থক। ফের তাঁদের দাপটে হোসেন শেখ তথা আদি তৃণমূল হিসাবে পরিচিত কর্মী-সমর্থকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সূচনাও তখন থেকে।

গদাধরবাবু ও সুব্রতবাবু একই সুরে দাবি করেছেন, গুলি চলার ঘটনার সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই। ও-সব

দুষ্কৃতীদের কাজ। পুলিশ বিষয়টি দেখছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ মোতাইন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন