ধন্দ আড়শায়

কারা পোস্টার দিল তৃণমূলের অফিসে

মাওবাদীদের নামে পোস্টার মিলল তৃণমূলের কার্যালয়ে। শনিবার সকালে পুরুলিয়ার আড়শার ঘটনা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সাদা কাগজে হাতে লেখা পোস্টারগুলি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তবে, এই কাজ আদৌ মাওবাদীদের কিনা, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুলিশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৩
Share:

মাওবাদীদের নামে পোস্টার মিলল তৃণমূলের কার্যালয়ে। শনিবার সকালে পুরুলিয়ার আড়শার ঘটনা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সাদা কাগজে হাতে লেখা পোস্টারগুলি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তবে, এই কাজ আদৌ মাওবাদীদের কিনা, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুলিশের।

Advertisement

এ দিন সকালে পুরুলিয়া শহরে জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের উদ্যোগে ইদ মিলন সভার কর্মসূচি ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য আড়শার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা স্থানীয় হাটতলার দলীয় কার্যালয় থেকে পতাকা বের করতে গিয়ে দেখেন মেঝের উপরে কয়েকটি হাতে লেখা পোস্টার পড়ে রয়েছে। জানালার পাল্লাও ভাঙা। একটি পোস্টারে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে হুমকি দেওয়া রয়েছে। একই ভাবে জেলা পরিষদে অনুন্নয়ন হলে সভাধিপতিকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি পোস্টারে আড়শা পঞ্চায়েতের প্রধান অপসারণ নিয়ে ঝামেলা হলে বিডিও দায়ী হবেন, এমন হুঁশিয়ারি ছিল। এলাকায় এ ধরনের আরও কয়েকটি পোস্টার মিলেছে, যেগুলিতে আড়শা পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধানের উদ্দেশে হুমকি আছে।

ঘটনার পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে আড়শা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। দলের আড়শা ব্লক সভাপতি আনন্দ মাহাতো বলেন, ‘‘পুলিশ গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক কে বা কারা রয়েছে ঘটনার পিছনে।’’ জেলা পুলিশ অবশ্য এই পোস্টারের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তাদের ধারণা, মাওবাদীদের নাম করে এই কাজ অন্য কারও। প্রথমত, পোস্টারগুলি গোলাপি রঙে লেখা। তা ছাড়া, পোস্টারগুলিতে যে দুই মাওবাদী নেতার নাম রয়েছে. তাঁদের এক জন পুলিশের হেফাজতে। অন্য জন মৃত। গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মাওবাদীরা এ ভাবে কোনও নেতার নাম উল্লেখ করে পোস্টার দেয় না। তা ছাড়া, এমন নির্দিষ্ট একটা পঞ্চায়েতের অনাস্থার মতো ছোট ঘটনা নিয়ে মাওবাদীরা সাধারণত মাথা ঘামায় না।’’ জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারও বলেন, ‘‘পোস্টারগুলির একটি মাওবাদী নামাঙ্কিত হলেও পোস্টারে একাধিক ভুল রয়েছে। বাক্য গঠনও সম্পূর্ণ নয়। তবে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, আড়শা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন বিরোধীরা। এই পঞ্চায়েতের মোট ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ৫টি, সিপিএম ৬টি এবং কংগ্রেসের ৪টি। এ ছাড়া, দুই নির্দল সদস্য আছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে তৃণমূল-সিপিএম এক সঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। প্রধান ও উপপ্রধান দু’টি পদই ছিল তৃণমূলের। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সমঝোতা হওয়ার পরে সিপিএমের ৬, কংগ্রেসের ৩ এবং এক নির্দস— মোট ১০ জন সদস্য প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। গত ১৫ জুন প্রশাসন সেই অনাস্থার চিঠির প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েতে তলবি সভাও ডাকে। কিন্তু কিছু বহিরাগত সভা ভন্ডুল করে দেয়। পর দিন অবশ্য কড়া পুলিশি প্রহরায় এই পঞ্চায়েতেই উপপ্রধানের অনাস্থার তলবি সভা হয়। বিরোধীদের দাবি, প্রস্তাবের পক্ষে ১০টি ভোট পড়েছিল।

প্রধানের বিরুদ্ধে ফের আস্থা ভোটের সভা না ডাকায় সম্প্রতি বিরোধীদের পক্ষ থেকে আড়শার বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পাশাপাশি উপপ্রধানের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পড়লেও তিনি কোন যুক্তিতে ওই পদে রয়েছেন, এই প্রশ্নও তোলেন বিরোধীরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী ১৬ অগস্ট প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার তলবি সভা হবে। এ দিন তৃণমূল কার্যালয়ে যে পোস্টারগুলি মিলেছে, তার একটিতে ১৬ তারিখে প্রধান অপসারণ নিয়ে ঝামেলা হলে বিডিও দায়ী হবেন, এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ব্লক তৃণমূল সভাপতি বলেন, ‘‘আস্থা ভোটে ফল যাই হোক, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু এ ভাবে এলাকার শান্তির পরিবেশকে অশান্ত করতে ইন্ধন জোগাচ্ছে কারা, তা খুঁজে বের করা দরকার।’’ কংগ্রেসের আড়শা ব্লক সভাপতি পুলকেশ কুমার বলেন, ‘‘আমার এই বিষয়টি জানা নেই।’’ বিডিও দিব্যেন্দু গোস্বামী জানান, পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার বিষয়। তা পুলিশ দেখছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৬ তারিখ তলবি সভা হবে বলে তিনিও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন