লক্ষ্য, পঞ্চায়েত ভোট

আদিবাসীদের নিয়ে সংগঠন গড়ছে তৃণমূল

আদিবাসী সমবায় সমিতিগুলিতে প্রত্যাশিত ফল হয়নি। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়াকে ঘিরেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে আদিবাসীদের একাংশের মধ্যে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০২:১৮
Share:

আদিবাসী সমবায় সমিতিগুলিতে প্রত্যাশিত ফল হয়নি। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়াকে ঘিরেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে আদিবাসীদের একাংশের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ায় আদিবাসীদের নিয়ে পৃথক সংগঠন গড়তে উদ্যোগী হয়েছে শাসক দল। আজ, শনিবার ‘আদিবাসী উন্নয়ন মঞ্চ’ নামে ওই সংগঠনের ব্যানারে রঘুনাথপুরের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকায় সভার আয়োজন করেছে তৃণমূল।

Advertisement

সম্প্রতি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আদিবাসী ল্যাম্পসের পরিচালন সমিতি নির্বাচনে ফের জিতেছে সিপিএম। যে পঞ্চায়েত এলাকায় সভা হচ্ছে, সেই নতুনডিতেও ল্যাম্পসের সমস্ত আসনেই হেরেছে শাসকদল। ফলে, নতুনডিতে সভা করার পিছনে আদিবাসীদের মন জয়ের চেষ্টা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘নতুনডি থেকে সভা শুরু হচ্ছে। ধাপে ধাপে জেলার সমস্ত এলাকাতেই এই ধরনের সভা হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন। জঙ্গলমহল হাসছে বলে বারবারই তিনি দাবি করেন। কিন্তু, বাস্তবে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল-সহ আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়নের কাজ অনেকটাই যে বাকি, তা সম্যক জানেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। এক বছর পরেই পঞ্চায়েত ভোট। সে দিকে লক্ষ রেখে এখন থেকেই আদিবাসী সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় আনার উদ্যোগ শুরু করেছে তৃণমূল।

Advertisement

কারণ আরও আছে। জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানাচ্ছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাশীপুরে এবং অতি সম্প্রতি রঘুনাথপুরে সরকারি সংস্থা ডব্লিউএমডিটিসি-র দু’টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাধায়। ক্ষোভ ঠিকঠাক সামাল দিতে পারায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তো বটেই, রাজ্য প্রশাসনের কাছেও নেতিবাচক বার্তা পৌঁছচ্ছে। পাশাপাশি আদিবাসী কুড়মি সমাজ যে ভাবে পুরুলিয়াতে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলন করছে, তাতে আদিবাসী সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় আনার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশই জোরালো হচ্ছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে।

দল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই জেলার বেশির ভাগ দলীয়। বিধায়ককে নিয়ে এই সংগঠন তৈরির বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন শান্তিরামবাবু। সেই মতো রাজ্য নেতৃত্বর কাছে সংগঠনের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, মানবাজারের বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টু়ডু ও বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেনকে আদিবাসী সংগঠন গড়ার বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনা হল, সিপিএমের আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চ বা বিজেপি-র আদিবাসী মোর্চা থাকলেও তৃণমূলের কিন্তু শুধু আদিবাসীদের নিয়ে কোনও সংগঠন নেই।

এই অবস্থায় আজ নতুনডিতে আদিবাসীদের বড় মাপের সমাবেশ করে নতুন উদ্যোগে সলতে পাকানোর কাজ শুরু করতে চান জেলা তৃণমূল নেতারা। সভায় থাকার কথা শান্তিরামবাবু, জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, রঘুনাথপুর মহকুমার তিন বিধায়ক ও জেলার দুই আদিবাসী বিধায়কের। থাকতে পারেন বর্ধমানে সভাধিপতি দেব টুডু। তবে, পঞ্চায়েত ভোট মাথায় রেখে এই সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে বলে মানতে নারাজ জেলা সভাপতি। শান্তিরামবাবুর দাবি, ‘‘আদিবাসীদের ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে তাঁদের ভুল বুঝিয়ে আদিবাসীদের উন্নয়নে রাজ্যর উদ্যোগকে বানচাল করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সেটা আটকাতেই আমরা এই সংগঠন তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছি।” যদিও সভার অন্যতম উদ্যোক্তা রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলে দিচ্ছেন, ‘‘নতুনডির সভা থেকেই আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন