মূর্তির মতোই অযত্নে পার্ক। পরিদর্শনে পুর-কর্তারা। ছবি: সুজিত মাহাতো
ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসা বিজেপি-র বিরুদ্ধে লেনিনের মূর্তি ভাঙার অভিযোগে সরগরম গোটা দেশ। আর সাড়ে তিন দশকের বাম সরকারকে সরিয়ে এ রাজ্যের ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সংস্কার করতে চলেছে কার্ল মার্ক্সের মূর্তি।
আজ, বুধবার ‘দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র লেখক কার্ল মার্ক্সের ১৩৫তম মৃত্যু দিন। তার আগেই তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া পুরসভা ঘোষণা করল, পুরভবন লাগোয়া পার্কে বহেলায় পড়ে থাকা মার্ক্সের পূর্ণাবয়ব মূর্তির তারা সংস্কার করবে।
লেনিনের মূর্তি ভাঙার নিন্দা করে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেউ ক্ষমতায় এসেছেন বলে মার্ক্স, লেনিন বা গাঁধীজি, নেতাজির মূর্তি ভাঙবেন, এটা তিনি মেনে নেবেন না! তিনি বলেন, ‘‘মার্ক্স বা লেনিন আমার নেতা নন। কিন্তু রাশিয়ায় লেনিন, মার্ক্স একটা ব্যক্তিত্ব।’’ এরপরেই কলকাতায় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে কালি লেপে দেয় দুষ্কৃতীরা। পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ধর্মতলায় লেনিন-মার্ক্সের মূর্তিকে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি-র যুব মোর্চা স্থানীয় ভাবে মনীষীদের মূর্তি পরিষ্কারের কাজে হাত দেয়। এ বার এগিয়ে এল পুরুলিয়া পুরসভা। ১৮১৮ সালে জন্ম হওয়া মার্ক্স মারা যান ৬৫ বছর বয়সে। তাঁর অবদান স্মরণ করে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। ২০০২ সালে পুরুলিয়া পুরসভা বামফ্রন্টের দখলে থাকার সময় পুরভবন চত্বরে জুবিলি ময়দানে মার্ক্সের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বিমান বসু। পরে আসে তৃণমূল। অযত্নে নষ্ট হচ্ছে মূর্তি। লাগোয়া পার্ক ঢেকেছে ঝোপ আর আগাছায়। জ্বলে না আলো। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জায়গাটা এখন নেশাড়ুদের ঠেক।
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান সোমবার মার্ক্সের মূর্তিটি দেখে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও ভাবেই মূর্তি ভাঙায় বিশ্বাসী নই। কার্ল মার্ক্সের মূর্তি পুরসভাই স্থাপন করেছিল, পুরসভাই সংস্কার করবে।’’ তিনি জানান, পার্কের ফোয়ারা দু’টি আলো ও ধ্বনি দিয়ে সচল করা হবে। সকালে-বিকেলে যাতে মানুষ এসে বসতে পারে, সেই ব্যবস্থা হবে।
পুরসভার সৌন্দর্যায়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বিভাসরঞ্জন দাস জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে পার্ক তৈরিতে ২৫ লক্ষ টাকা মিলেছে। তা থেকেই মার্ক্সের মূর্তি সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন হবে। এই ময়দানে সুভাষচন্দ্র বসু সভা করেছিলেন। তাঁরও একটি মূর্তি স্থাপন করা হবে।’’
প্রাক্তন সিপিএম পুরপ্রধান বিনায়ক ভট্টাচার্যের সময়ে মার্ক্সের মূর্তি বসানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘মার্ক্সের মূর্তিটি নির্মাণ করেন ভাস্কর ধ্রুব দাস। পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’’
একই মত সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘ওই মূর্তি সংস্কারে পুরসভার এই উদ্যোগ স্বাগত।’’