TMC Dharna

ফলক-বিতর্কে কবি-ছবি নিয়ে ধর্নায় তৃণমূল

রাজভবন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। বিশ্বভারতীর প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল খোঁজখবর নিয়েছেন এ বিষয়ে বলেও জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫৬
Share:

বিশ্বভারতী বিশ্ব ঐতিহ্য ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম না থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শান্তিনিকেতন হস্ত শিল্প মার্কেটে তৃণমূলের ধর্না। ছবিঃ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

ফলক-বিতর্ক ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে বিশ্বভারতীর স্বীকৃতি-ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ফেরানোর দাবিতে শুক্রবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য দিকে, কেন ফলকে রবীন্দ্রনাথের নাম নেই, তা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন বিশ্বভারতীর রেক্টর তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।

Advertisement

শান্তিনিকেতন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই উপলক্ষে বিশ্বভারতী যে ফলক বসিয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম থাকলেও রবীন্দ্রনাথের নাম নেই। এই নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও শান্তিনিকেতন আশ্রম সঙ্ঘ। একই ভাবে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের (ভিবিইউএফএ) তরফেও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ও রাজ্যপালকে ই-মেল করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ফলক-কাণ্ড নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

সূত্রের খবর, রাজভবন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। বিশ্বভারতীর প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল খোঁজখবর নিয়েছেন এ বিষয়ে বলেও জানা গিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন বাংলা, ভারত ও বৃহত্তর মানবতার কাছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার প্রতীক।’’

Advertisement

শুক্রবার সকালের মধ্যে ফলকে রবীন্দ্রনাথের নাম না ফেরানো হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতন যে হেরিটেজ তকমা পেয়েছে, তা রবীন্দ্রনাথের জন্যই। আর তাঁর নামই সরিয়ে দিল? শুক্রবার সকালের মধ্যে যদি না ফলকে নাম ফেরানো হয়, তাহলে ওখানে আমাদের দল রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন করবে।”

ফলকে অবশ্য এ দিন বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতার নাম ফেরেনি। পুরনো ফলক এখনও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো শুক্রবার সকালে শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটে মঞ্চ বেঁধে রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে বেঁধে অবস্থান করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অবস্থানে বসেছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বোলপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধিরা, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার, বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিশ্বভারতী ইউনিটের সভানেত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য এবং ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।

মঞ্চে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে ও বক্তৃতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের ‘অপমানের’ প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে উপাচার্যের কার্যকলাপ নিয়ে এ দিন সরব হন শাসকদলের নেতারা। চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “শান্তিনিকেতন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বভারতীর ফলকে তাঁরই নাম নেই! বিশ্বভারতীতে এই ফলক-প্রথা কোনও দিন ছিল না। ফলক না-সরলে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’’ উপাচার্যকে বিঁধে মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ওঁর ভূমিকা সবাই জানেন। উনি কখন কী করেন, তা উনি নিজেও জানেন না। আমরা চাই, উপাচার্যের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।” আশ্রমিক অনিল কোনারের দাবি, ‘‘শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের জায়গায় ফলক লাগানোর কোনও অধিকারই বিশ্বভারতীর নেই। অবিলম্বে ফলক না-সরানো হলে এই আন্দোলন চারদিকেছড়িয়ে পড়বে।”

ছাত্রনেত্রী মীনাক্ষী বলেন, “বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন বলতে রবীন্দ্রনাথের নামই সর্বাগ্রে মনে আসে। অথচ তাঁকেই ব্রাত্য রেখে ফলক বসিয়ে উপাচার্য যে কাজ করেছেন, তাতে আমরা সকলেই লজ্জিত। ফলক না-সরা পর্যন্ত লড়াই চলবে।’’ আজ, শনিবারও ওই মঞ্চে আন্দোলন হবে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। গোটা বিষয়টি নিয়ে এ দিন বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন