বক্তব্য রাখছেন পূর্ণেন্দুবাবু। ছবি:নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলের পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন করা যাবে না। বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডের দলমা এলাকার মানুষদের সাথে নিয়ে এই দাবি তুললেন এ রাজ্যের তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতারা। শনিবার পটমদার ধুসরা ফুটবল মাঠে দলমা ক্ষেত্রগ্রাম সভা সুরক্ষামঞ্চের সভায় উপস্থিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু ও পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো পড়শি রাজ্যের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন।
নোট-বন্দি পর্বে তলানিতে চলে এসেছে কেন্দ্র ও এ রাজ্যের সম্পর্ক। তার মধ্যে রোজভ্যালি কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে দুই সাংসদের গ্রেফতারিতে দিল্লির সঙ্গে তিক্ততা আরও বেড়েছে। এই সুযোগে বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষদের কাছে পেতে নামল তৃণমূল।
২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার দলমার ১৩৬টি মৌজা চিহ্নিত করে ওই এলাকা ‘ইকো সেন্সেটিভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করে। দলমা ক্ষেত্রগ্রাম সভা সুরক্ষামঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক পটমদার বাসিন্দা প্রদীপ বেসরার দাবি, ‘‘ওই এলাকায় ঢালাইয়ের কাজ করা যাবে না, চাষে কীটনাশক দেওয়া যাবে না, ইটভাটাও করা যাবেনা— এ রকম প্রায় ২১টি নির্দেশিকা কেন্দ্র জারি করে। ওই সব নির্দেশিকা মানতে গেলে এলাকার মানুষজনের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠবে। এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেশী রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের পাওয়ায় আমাদের আন্দোলন আরও গতি পাবে।’’
আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, ঘোষণা আগে হলেও সম্প্রতি ওই নিয়মাবলী না মানা হলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসে। এতেই বাসিন্দারা সঙ্কটে পড়েছেন। পাথর খাদান, ইটভাটা প্রভৃতি জায়গায় যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকী চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় চাষের অবস্থাও ভাল নয় বলে তাঁদের অভিযোগ।
ওই এলাকার পাশেই পুরুলিয়ার বরাবাজার, বান্দোয়ান, বোরো থানা এলাকা রয়েছে। দু’রাজ্যের লোকজনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবেশীদের জীবন সঙ্কটময় হতে চলেছে। এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।’’ পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘জঙ্গলের পরিবেশ দূষণের দোহাই দিয়ে কোনওভাবেই গরিব মানুষদের অসুবিধার মধ্যে রাখা যাবে না। এঁদের অভাব অভিযোগ শুনলাম। পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গিয়ে জানাব।’’ সভায় ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার স্থানীয় নেতারাও। যদিও ঝাড়খণ্ডের খাদ্যমন্ত্রী তথা পরিবেশ আন্দোলনের নানা কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সরযু রায়ের আশ্বাস, ‘‘কোনও এলাকা ইকো সেনসেটিভ জোন হলে কিছু বিধি নিষেধ থাকবেই। তবে এর ফলে আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে কোনও সমস্যা হলে তা অবশ্যই সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হবে।’’ এলাকার সাংসদ বিজেপির বিদ্যুৎ মাহাতোর দাবি, ‘‘শুধু ক্রাসার ও ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা লোকজনকে বোঝাব।’’