রুটে বাঁধা পড়ল বাঁকুড়ার টোটো

টোটো-রিকশার অশান্তি রুখতে অবশেষে শহরের মধ্যে টোটো চলাচলের রুট নির্দিষ্ট করে দিল প্রশাসন। আগামী বুধবার থেকে সেই রুট মেনেই বাঁকুড়া শহরে চলাচল করবে টোটো। রুট অনুযায়ী, শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলা মোড় থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়েই থমকে যাবে টোটো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

টোটো-রিকশার অশান্তি রুখতে অবশেষে শহরের মধ্যে টোটো চলাচলের রুট নির্দিষ্ট করে দিল প্রশাসন। আগামী বুধবার থেকে সেই রুট মেনেই বাঁকুড়া শহরে চলাচল করবে টোটো। রুট অনুযায়ী, শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলা মোড় থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়েই থমকে যাবে টোটো। দাঁড়াতে পারবে না শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাস স্টপেও।

Advertisement

এই নিয়মে রিকশা চালকেরা খুশি হলেও ভাঁজ পড়েছে যাত্রীদের কপালে। শহরের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রুট বেঁধে দেওয়ায় টোটো এবং রিকশা চালকদের বচসা মেটানো ঝঞ্ঝাট প্রশাসনকে আর বিশেষ পোহাতে হবে না। কিন্তু প্রতিযোগিতা না থাকায় শহরে রিকশা ভাড়া ফের লাগাম ছাড়া ভাবে বাড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে টোটোর রুটের মতো রিকশার ভাড়াও যাতে প্রশাসন বেঁধে দেয় সেই দাবি তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ।

বুধবার থেকে কোন পথে চলবে টোটো?

Advertisement

মাইকে ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই শহরে টোটোর রুট নিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জানানো হয়েছে, টোটোর স্ট্যান্ড হবে শহরের গোবিন্দনগর, কাটজুড়িডাঙা ছোটমোড়, পাঁচবাগা মোড়, জুনবেদিয়া মোড় এবং সতীঘাটমোড়ে। শহরের মধ্যে যাত্রী তোলা যাবে ভৈরবস্থান, তামলিবাঁধ, কলেজমোড়, নতুনচটি প্রভৃতি এলাকা থেকে। টোটো চলবে জুনবেদিয়া থেকে প্রতাপবাগান হয়ে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম যাওয়ার রাস্তায়। সার্কিট হাউস মোড় থেকে দমকল কেন্দ্র যাওয়ার রাস্তাতেও চলবে। জেলা স্কুলের মোড় পর্যন্ত টোটো যাবে।

তবে মানচানতলা, চকবাজার, পোদ্দারপাড়া-সহ শহরের জনবহুল বেশ কিছু এলাকায় টোটো চলবে না। রেল স্টেশন, লালবাজার বা কেরানিবাঁধ বাসস্টপে টোটো চলাচলের অনুমতি মেলেনি। প্রশাসনের এই নির্দেশে খুশি রিকশা চালকেরা। বাঁকুড়া শহর রিকশা চালক ইউনিয়নের সভাপতি সুজিত রায় বলেন, “শুধু রুট নির্ধারণ করে দিলেই হবে না। টোটো যাতে রুট মেনে চলে সে দিকেও নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, যাত্রীপিছু ভাড়া হিসাবে নিয়মিত টোটো চালাচলের ক্ষেত্রে এই রুট মানতে হবে। কিন্তু টোটো রিজার্ভ করে রেল স্টেশন-সহ বিভিন্ন জায়গাতে যাওয়া যেতেই পারে। বাঁকুড়া জেলা ই-রিকশা ইউনিয়নের উপদেষ্টা হিরণ চট্টরাজ বলেন, “অশান্তি এড়াতে আমরা প্রশাসনের দেওয়া রুট মেনে নিয়েছি।” তাঁর দাবি, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি থেকে অনেকটা দূরে টোটোর রুট শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জেলা স্কুল মোড়ের বদলে মাচানতলা পেট্রোলপাম্প মোড় পর্যন্ত টোটো চলাচলের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহরের কয়েকটি বাসস্টপেও যাতে টোটো রাখা যায় প্রশাসনের কাছে সেই আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।

কিছু কাল আগেও বাঁকুড়া শহরের মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল রিকশা। গত কয়েক বছরে রিকশা ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। যাত্রীদের ক্ষোভ, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এবং প্রতিযোগিতা না থাকায় রিকশা চালকেরা একছত্র কারবার শুরু করেছিলেন। অভিযোগ, অল্প দূরত্ব যেতেও খেয়াল খুশি মতো ভাড়া হাঁকতেন রিকশা চালকেরা। শহরের পথে টোটো নামার পরে ছবিটা অনেকটাই বদলে যায়। রিকশার তুলনায় টোটোর ভাড়া অনেকটাই কম হওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই সেই দিকে ঝুঁকতে থাকেন। টোটো বন্ধের দাবিতে রিকশা চালকদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়।

টোটোর রুটে লাগাম টানায় যাত্রীদের অনেকেই ফের রিকশা ভা়ড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। শহর সংলগ্ন মিথিলা এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা মানু কর্মকার বলেন, “টোটোয় চড়ে শহরের মধ্যে বাজারহাট করতে গেলে ৬০ টাকাতেই হয়ে যেত। এখন রিকশায় নিদেন পক্ষে ১০০ টাকা গুণতে হবে।’’ অরবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “টোটোর যে রুট করা হয়েছে, তাতে ফের রিকশার একছত্র কারবার শুরু হবে।’’ টোটোর যে রুটগুলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ। বাঁকুড়ার নিত্যযাত্রী বড়জোড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ ঘোষ বলেন, “মাচানতলা এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। জেলাস্কুলের মোড় থেকে মাচানতলা হেঁটে যাওয়ার রাস্তা নয়। ফলে স্কুল মোড়ে টোটো থেকে নেমে বাড়তি আরও ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হবে।’’ কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘শহরে পরিবহণ ব্যবস্থা বলে এমনিতেই কিছু নেই। তার উপরে স্টেশনে যদি টোটো না পাওয়া যায়, যাত্রীদের ভোগান্তির একশেষ হবে।’’

এই পরিস্থিতিতে রিকশার ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করেছেন তাঁরা। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা বলেন, “সব পক্ষের মতামত নিয়েই টোটোর রুট ঠিক করা হয়েছে। রিকশা ভাড়া সুনির্দিষ্ট করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুরসভাকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।” শীঘ্রই রিকশা ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রিকশা চালক ইউনিয়নের সভাপতি সুজিতবাবুও বলেন, “প্রশাসন যদি রিকশা ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেয় আমাদের মানতে বাধা নেই। তবে আলোচনা করে ভাড়া ঠিক করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন