দু’শো বছর পরে চলল রসপালের রাজবাড়ির রথ

ইংরেজ শাসনে রাজত্ব চলে গিয়েছিল। তাই রাগে রাজবাড়িতে জগন্নাথদেবের বিগ্রহের পুজোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাজা। বন্ধ করে দিয়েছিলেন রথযাত্রাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৬
Share:

রথ দেখতে মানুষের ঢল। ছবি তুলেছেন উমাকান্ত ধর।

ইংরেজ শাসনে রাজত্ব চলে গিয়েছিল। তাই রাগে রাজবাড়িতে জগন্নাথদেবের বিগ্রহের পুজোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাজা। বন্ধ করে দিয়েছিলেন রথযাত্রাও।

Advertisement

বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লকের রসপাল রাজবাড়ির সেই প্রাচীন রথযাত্রা গত দু’শো বছর ধরে বন্ধ ছিল। রাইপুর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সেই হারিয়ে যাওয়া রথযাত্রা নতুন করে চালু হল রসপালে। শনিবার বিকেলে রসপাল রাজবাড়ি থেকে নতুন রথের রশিতে টান দিয়ে রথযাত্রার সূচনা করলেন রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস। দীর্ঘদিন পরে এলাকায় রথ দেখতে উপছে পড়ল ভিড়। রাত পর্যন্ত আনন্দে মাতোয়ারা হলেন জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।

কথিত আছে, একসময়ের তুঙ্গভূমি ছিল এই রসপাল। কংসাবতী ও তারাফেনি নদীর মধ্যবর্তী এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছিল রসপাল রাজবাড়ি। ইতিহাসের পাতা থেকেই জানা যায়, প্রায় ২১০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনকালে রসপালের রাজা শশাঙ্ক নারায়ণ তুঙ্গ দেও-র আমলে জমিদারি চলে যায়। রাজবাড়িতে জগন্নাথদেবের কাঠের বিগ্রহ থাকাকালীন রাজত্ব চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন রাজা শশাঙ্ক নারায়ণ তুঙ্গ দেও। রাগে রাজবাড়িতে জগন্নাথদেবের পুজো বন্ধ করে দেন। এমনকী রাজপরিবারের কেউ যেন আর পুরী না যান তারও ফতোয়া দিয়েছিলেন। তারপর বন্ধ করে দেন রথযাত্রা।

Advertisement

রসপাল রাজপরিবারের বর্তমান বংশধর পশুপতি নারায়ণ তুঙ্গ দেও বলেন, “আমাদের পারিবারিক অবস্থা এখন ভাল নয়। রাজবাড়ি ধসে পড়ছিল। আমাদের পক্ষে রথ বের করা আর সম্ভব ছিল না। বিডিও বিষয়টি জানতে পেরে রাজবাড়ির সংস্কারের কাজ করেছেন। নতুন করে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার কাঠের মূর্তি স্থাপন করে রথ বানানো হয়েছে। এ দিন সেই রথ ফের চলল। এতদিন পরে রথ দেখে আমরা সবাই খুশি।” রাইপুরের বিডিও বলেন, “এলাকার ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ির রথযাত্রা এতদিন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে জানতে পেরে একটা ট্রাস্টি বোর্ড গড়েছিলাম। রসপাল রাজবাড়ির সদস্য সুশান্ত নারায়ণ দেও-কে সম্পাদক করে রাজবাড়ি সংস্কারের কাজ করা হয়। নতুন করে মূর্তি স্থাপন করে রথযাত্রা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সকলের প্রচেষ্টায় আবার রসপালে রথ বের হল।’’

শনিবার বিকেলে রসপাল রাজবাড়ি থেকে রসপাল মোড় হয়ে রথ যায় দু’কিলোমিটার দূরের দেবাশোল গ্রামে। রথ দেখতে রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। এতদিন পরে রথ দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত রসপাল, ফুলকুসমা, দেবাশোল, চামটাবাদ-সহ বহু গ্রামের বাসিন্দারা। চামটাবাদের বাসিন্দা মার্শাল মুর্মু, বিজন সর্দার বলেন, “বহুকাল আগে রসপালে রথ বের হতো বলে শুনেছিলাম। এতদিনে তা চাক্ষুস করলাম। বিডিও-র অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হল। ওঁনাকে ধন্যবাদ।”

রথকে ঘিরে এই জনপ্লাবন মনে করিয়ে দিল রসপাল রাজবাড়ির ঐতিহ্যকে। যে ঐতিহ্য একদিন হারিয়ে গিয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া সেই রথের স্মৃতি অবশ্য টাটকা দেখলেন জঙ্গলমহলের একদা তুঙ্গভূমির বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন