পুজোর আগে নবপত্রিকা নিয়ে গোপাল সায়রের পথে। ছবি: শুভ্র মিত্র।
গর্জাল নয় কামান, ঢাকে পড়ল কাঠি, এলেন বড় ঠাকুরন। মূল পুজোর ১৩ দিন আগেই বিষ্ণুপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল মঙ্গলবার।
রাজবাড়ির উল্টো দিকে গোপালসায়র। সেখানে এ দিন নবপত্রিকার স্নানপর্ব শেষ হতেই প্রথমে গর্জে উঠল তিনটি কামান। মৃন্ময়ী মন্দিরে পটদুর্গা ‘বড় ঠাকুরন’ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আরও তিনটি। সবশেষে দুপুরে ভোগপর্বের পর আরও তিন কামানের তোপ। যার সূত্র ধরে এক সময় মল্ল রাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুর জেনে গেল, রাজবাড়ির পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। মা দুর্গার নাম এখানে ‘মৃন্ময়ী’।
ইতিহাস বলছে, ৩০৩ মল্লাব্দে (বাংলার ৪০৪ সালে ও ইংরেজি ৯৯৭ খৃস্টাব্দে) এই পুজোর প্রচলন করেন মহারাজা জগৎ মল্ল। সম্পূর্ণ গঙ্গা মাটির প্রতিমা। চালচিত্রও ভিন্ন। ডান দিকে কার্তিকের নীচে সরস্বতী। বাঁ দিকে গণেশের নীচে লক্ষ্মী। উপরে ভূত-প্রেত নিয়ে নন্দী-ভৃঙ্গি সহ শিব। আর মাঝে অসুরের সঙ্গে যুদ্ধরত দুর্গা। পুজোর বৈচিত্র ও বৈশিষ্টের কথা জানাতে গিয়ে রাজবাড়ির প্রতিনিধি সলিল সিংহ ঠাকুর বলেন, “রাজবাড়ির কেউ স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই দেবীর অঙ্গরাগ হয়। অথ বলিনারায়ণী পুজো পদ্ধতি মেনে চলা হয় আমাদের পুজোয়।’’ তিনি জানান, তিন পটেশ্বরী মৃন্ময়ী মূর্তির বাঁ দিকে পুজো পান। শুরুতেই এ দিন এলেন বড় ঠাকুরন। ইনি ‘মহাকালী’। মান চতুর্থীর দিন আসবেন মেজ ঠাকুরন। তিনি ‘মহা সরস্বতী’। আর মহা সপ্তমীর দিন সকালেই বসবেন ছোট ঠাকুরন। তিনি ‘মহালক্ষ্মী’। তিন জনেই পটের দেবী।
অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা হবে বড় কামানের গর্জনে। যার আওয়াজে রাজবাড়ির সঙ্গে সঙ্গে আরতি নৃত্য শুরু হবে তামাম ‘মল্লভূমে’। মহানবমীর খচ্চরবাহিনীর পুজোও বেশ বৈচিত্রময়। মাঝরাতের এই পুজোয় রাজবাড়ির সদস্য ও পুরোহিত ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। জনশ্রুতি, এই দেবী মহামারির হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করেছিলেন। দেবীর রূপ দর্শন না করে পিছন ফিরে পুজো করেন পুরোহিত। সাবেকি প্রথার ভিন্ন পুজো পদ্ধতি দেখতে অনেকেই ভিড় জমান প্রাচীন মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে। এ বারও অনেকে এসেছেন সেই ঐতিহ্যের টানেই।