চুরি গিয়েছে পথ, যানজটে নাকাল শহর

দু’টি গ্রাম নিয়ে একটি শহর। নলহাটি। দু’টি গ্রাম— কালিন্দীপুর আর নলহাটির মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে রেল লাইন। এ শহরের পরিধি যত বাড়ছে, নিত্যদিন যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকায়, বাড়ছে যানজট। কেন না, পথই চুরি গিয়েছে শহরের। বিকিকিনির ছবি পথের মাঝেই সারা শহরে।

Advertisement

সব্যসাচী ইসলাম

নলহাটি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৫
Share:

যানজটে জেরবার শহরের পথ। এ ছবি রোজকার। —ফাইল চিত্র।

দু’টি গ্রাম নিয়ে একটি শহর। নলহাটি। দু’টি গ্রাম— কালিন্দীপুর আর নলহাটির মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে রেল লাইন। এ শহরের পরিধি যত বাড়ছে, নিত্যদিন যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকায়, বাড়ছে যানজট। কেন না, পথই চুরি গিয়েছে শহরের। বিকিকিনির ছবি পথের মাঝেই সারা শহরে।

Advertisement

নলহাটি ব্যবসার ক্ষেত্র দীর্ঘদিনের। রেললাইনের পুবদিকে কালিন্দপুর, এটাই ছিল বাজার। আর নলহাটি ছিল জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ে বসতি। নলাটেশ্বরী থেকে সাবেকি নাম নলহাটি। পরে নলহাটি গঞ্জ থেকে শহরে রূপান্তরিত হয়। বাড়তে থাকে পরিধি। কালিন্দিপুর ও নলহাটি হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে আশপাশের ছ’টি গ্রাম নিয়ে নলহাটি পুরসভা শহর গঠন হয় ২০০২ সালে। এখন যেটি নলহাটি শহর সেখানে পাথর ভাঙা মেশিন ছিল। ছোট রেল লাইন বসিয়ে লক্ষামারা এলাকা থেকে পাথর নিয়ে আসা হত। ও নলহাটিতে ভাঙা হত। সেই পাথর রেলে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত। পরে পাথর ভাঙা মেশিন উঠিয়ে বসতি বাড়ে। পাথর শিল্পের পরিধি বাড়তে থাকে, বহিরাগত মানুষের নলহাটি শহরে থাকতে শুরু করে।

এ শহরে যানজট নিয়ে বার বার সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি হয়। তবুও এ সমস্যার যেন কোনও সমাধান নেই! শহরের প্রধান রাস্তায় উপর বসে সব্জি হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা সব্জি শহরে আসে। সেই সমস্ত সব্জি এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে রাস্তার উপর বসে পড়ে। ফলে সাইকেল, মোটর বাইক, রিক্সা নিয়ে চলাচলের উপায় থাকে না। মৌচাক মোড় থেকে ডাক বিভাগের দফতর পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য ছোট বড় দোকান। সেই সব দোকানে ক্রেতারা ঢুকলে দোকানের সামনে রাস্তার উপর সাইকেল, মোটর বাইক দাঁড় করিয়ে রেখে রাস্তার উপর রাখা টুল বা বেঞ্চের উপর চলে কেনা বেচা। ফলে রাস্তা ছোট থেকে আরও ছোট হয়। বাড়ে যানজট, ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দেখে এলাকার বড় বড় দোকানগুলো ফুটপাতে মালপত্র সাজিয়ে রাখে। রেলগেটে বসে পড়ে ফল বিক্রেতা, ছোট ছোট দোকান। রেল গেট নলহাটি শহরকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। স্থানীয়দের দাবি, রেল গেটে ফল ব্যবসায়ীদের জন্য রাস্তার পরিধি ছোট হয়ে গেছে। আর দীর্ঘক্ষণ রেলগেট বন্ধ থাকলে দু’পাশে বাড়তে থাকে যানজট।

Advertisement

শহরের বাসিন্দা, প্রাক্তন শিক্ষক মথুরা প্রসাদ সাউ বলেন, ‘‘শহরের পরিধি বাড়ছে, কিন্তু শহরের কোনও রূপরেখা তৈরি হয়নি আজও। নিত্যদিনের যানজটে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে সমস্যয় পড়তে আমাদের মত প্রবীণ নাগরিকদের। আগামী দিনে যানজট মুক্ত সুন্দর শহর পেতে চাই পুরসভার কাছ থেকে।’’ আরেক বাসিন্দা, পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী চন্দ্রশেখর প্রসাদ বলেন, ‘‘মোটর বাইকে ব্যবসার কাজে বিভিন্ন কাজে এখান ওখান যেতে হয়, যানজটের জন্য সঠিক সময়ে নলহাটি থেকে বার হতে পারি না।’’ নলহাটি শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে সেচ দফতর ও কলোনি। সেই পাঁচিলে প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা স্থায়ী দোকান করার অনুমতি দিয়েছিলেন তার ফলে বিদ্যালয়ে সামনে বেড়ছে যানজট। এমন অভিযোগ শহরেরই একাংশের। এ শহরে নির্দিষ্ট কেন নিয়ম নিতি নেই শহরে মালবোঝাই গাড়ি ঢোকার, যখন তখন শহরে গাড়ি ঢোকার ফলে নিত্যদিন যানজটে পড়তে হয় সাধারণ মানুষজনকে। শহরে মোটর চালিত ভ্যান পুরসভা ও পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু কিছু ব্যবাসায়ী পুরসভা ও পুলিশের কাছ থেকে সেই অনুমতি আদায় করে নেয়। ফলে শহরে যানজট সমস্যা রয়েই গিয়েছে।

এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রতিদিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের সামনে মাল বোঝাই লরি ঘুরতে আটকে যানজটের সৃষ্টি করে। অপর দিকে বাজারে কাঁচা সব্জি নামানোর জন্য লরি ঢোকাতেও করে যানজট তৈরি হচ্ছে। ডাক বিভাগের দফতর থেকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে ফুটপাতের উপর গজিয়ে উঠেছে দোকান, ফলে নলহাটি থেকে মুরারইগামী বাস ও লরি ঢুকলে ও দ্বিতীয় রেলগেট(অজিমগঞ্জ গেট) বন্ধ থাকলে শহরে প্রবেশ করতে সমস্যায় পড়তে হয়।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভা কোনও নির্দেশ দেয়নি। আর ব্যবসায়ী সমিতির তরফ থেকে আবেদন করেছে স্কুল সময় বাদ দিয়ে যেন গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় শহরে। কিন্তু জেলা পুলিশ চায় কোনও মোটর চালিত ভ্যান শহরে যেন না ঢোকে।’’ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তপন দত্ত বলেন, ‘‘আমরা সমিতির তরফ থেকে বারবার ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি, রাস্তায় যেন তারা না বসে। বেআইনি ভাবে যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা রাস্তায় ব্যবসা করছে, প্রশাসন তাদের প্রতি কোনও ব্যবস্থা নিলে আমরা কিছু বলব না।’’

কী বলছেন পুরপ্রধান?

পুরপ্রধান রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘পুজো পর্যন্ত সময় দিয়েছি। পুজোর পর আমরা হকার মুক্ত শহর করব। আর মালবাহী গাড়ি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি সকাল ৮টা থেকে ১২ ও বিকেল ৪টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত শহরে প্রবেশ করবে না। কেন মানা হচ্ছে না, সেটা পুলিশ বলতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন