দুর্ঘটনার পরে থমকে যায় রাজধানী এক্সপ্রেস। বিষ্ণুপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্ল্যাটফর্মে শৌচালয় রয়েছে। কিন্ত তা ব্যবহার না করে রেল লাইন পেরিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন এক প্রৌঢ়। ফিরে যখন ফের প্ল্যাটফর্মে উঠছেন, টের পাননি পিছন থেকে ধেয়ে ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে ট্রেন। সেই দিল্লি-ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস মধুসূদন ঘোষকে (৫৫) পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার সকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ঘটনা। মধুসূদনবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হয়েছেন তাঁর আত্মীয় রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার হরিদাস রায় জানান, সকাল ৯টা ১৮মিনিটে ভুবনেশ্বরগামী ডাউন দিল্লি-ভুবনেশ্বর এক্সপ্রেস বিষ্ণুপুর স্টেশন দিয়ে পাস করছিল। ট্রেনটি ওই স্টেশনে দাঁড়ায় না। লাইন পার হয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠার সময় ট্রেনে কাটা পড়েন মধুসূদনবাবু।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের বাড়ি কোতুলপুর থানার চকচাঁদ গ্রামে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সম্পর্কিত ভাইপো রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি তড়িঘড়ি কাকাকে টেনে প্ল্যাটফর্মে তোলার চেষ্টা করছিলেন। ট্রেনে তাঁর হাতে ধাক্কা মেরে চলে যায়। রবীন্দ্রনাথবাবুও জখম হন। তাঁকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া মধুসূদনবাবুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়ায় পাঠিয়েছে রেল পুলিশ। দুর্ঘটনার পরে কেবিনের কাছে প্রায় ১৬ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেনটি।
এ দিন সকালে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, ডান হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে রয়েছেন বছর চল্লিশের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি জানান, তাঁরা দু’জনেই দুধের ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি মেদিনীপুরের এক জনের থেকে দু’জনে দু’টি গরু কেনেন। কিন্তু সেগুলি ভাল দুধ না দেওয়ায় পাল্টে দেওয়ার জন্য কথা বলতে মেদিনীপুর যাচ্ছিলেন। ৯টা ৪০ মিনিটের ট্রেনটা ধরার কথা ছিল। ট্রেন আসার দেরি দেখে শৌচ করতে লাইনের অন্য ধারে গিয়েছিলেন মধুসূদনবাবু।
বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে উঠে রবীন্দ্রনাথবাবু বললেন, ‘‘ট্রেনের আওয়াজ পেয়েই আমি প্ল্যাটফর্ম থেকে চিৎকার করে বলছিলাম, আমাদের ট্রেন নয়। কাকা যেন লাইন না পেরোন। কিন্তু সেই কথা কাকা শুনতে পাননি। আমাকে আশপাশের লোকজন ধরে না ফেললে আমাকেও ট্রেন টেনে নিত হয়তো।’’ মধুসূদনবাবুর তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘কাকিমাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব ভেবে পাচ্ছি না।’’
বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবুর ডান হাত ছড়ে যাওয়ায় প্লাস্টার করা হয়েছে। মাথায় সিটি স্ক্যান করানো হবে। তবে আঘাত গুরুতর নয়।’’
এ দিন রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বারবার সচেতনতার প্রচার করা হয়। কিন্তু মানুষজনের শৌচলয় ব্যবহারে অভ্যাস এখনও ভাল ভাবে হয়নি। না হলে হয়তো এত বড় একটি দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’