শিকল কেটে সম্মান, ১০ মাঝি হাড়ামের

‘ডাইনি’ প্রথার শিকার হয়ে ২০০৮ সালে খুন হন, মনেডাঙার বাসিন্দা বাসিনি সরেন। খুনের বারো দিন পর, ওই ভয়াবহ ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে!

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৪
Share:

‘ডাইনি’ প্রথার শিকার হয়ে ২০০৮ সালে খুন হন, মনেডাঙার বাসিন্দা বাসিনি সরেন। খুনের বারো দিন পর, ওই ভয়াবহ ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে!

Advertisement

বছর দুয়েক আগে, ফের একই এলাকায় সুমি টুডু নামের এক বাসিন্দাকে ‘ডাইনি’ দেগে দেয় তাঁদের সমাজের মাতব্বরদের একাংশ। বাসিনির খুনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হতে দেননি স্থানীয় নীলডাঙা সিধু-কানু স্মৃতি সংঘ। ওই সংঘের কর্মকর্তাদের উদ্যোগ এবং এলাকার আদিবাসী প্রধান বা মাঝি হাড়াম ছোটন মুরমু রুখে দাঁড়ান। প্রাণে বেঁচে যান সুমি।

নীলডাঙা এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী সরেনকেও একই ভাবে তাঁর সমাজের একাংশ নির্যাতন করত। ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে, এলাকা ছাড়া না হলে পিটিয়ে খুনের নিদান দিয়েছিল আদিবাসী সমাজের মাতব্বরদের একাংশ। নীলডাঙার ওই সংঘের উদ্যোগ এবং স্থানীয় বাদল সরেনের সহায়তায় হেনস্থা এবং নির্যাতন আটকানো গিয়েছে লক্ষ্মী সরেনের।

Advertisement

ঘটনা তিন, শান্তিনিকেতন থানার রূপপুরের মধুপুর গ্রামের। বছর তিনেক আগে ওই গ্রামের এক আদিবাসী মহিলা তাঁদের সমাজের কুসংস্কারের শিকার হন। ‘ডাইনি’ অভিযোগ তুলে গ্রামছাড়া, মোটা জরিমানা না হলে পিটিয়ে খুনের নিদান দেয় এলাকায় মাতব্বরেরা। ঘটনার কথা জানতে পেরে আদিবাসী প্রধান ছোটন মুরমু, বাদল সরেন এবং ভাদু হাঁসদা গ্রামে গিয়ে সচেতনতার পাঠ দেন। রুখে দাঁড়ান কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে।

বস্তুত, আদিবাসী সমাজে এমন কু সংস্কার বা কু-প্রথার শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দশ আদিবাসী প্রধানের সহায়তা ও প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানাতেই সংবর্ধনা দিচ্ছে আজ শুক্রবার বোলপুরের নীলডাঙা সিধু-কানু স্মৃতি সংঘ। মূলত এই দশ মাঝি পারগানা বা, আদিবাসী প্রধানের উদ্যোগে চলছে এলাকায় সচেতনতা এবং আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজকর্ম। আদিবাসী সমাজের ‘ডাইনি’ প্রথার মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য, বিশ্বভারতীর পল্লি সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং মহকুমা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত সচেতনতা শিবিরে পাঠ নিয়েছেন এমন একাধিক আদিবাসী সমাজের প্রধানেরা। বাহা পরব উপলক্ষে ওই সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রকাশিত হবে শিক্ষক তথা নাট্যকার শিবু সরেনের রচিত সাঁওতালি নাটক ‘চেৎ চেকায়েনা’ যার অর্থ ‘কি হয়েছে।’

উদ্যোক্তাদের অন্যতম ওই সংঘের সভাপতি বুদি টুডু বলেন, ‘‘আদিবাসী মানুষদের জন্য নানা উদ্যোগের পাশাপাশি আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতি অবদানের জন্য এই পরবে আশেপাশের দুটি গ্রামের দশ মাঝহি পারগাণাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’ বিশ্বভারতীর সাঁওতালি বিভাগের প্রধান ধনেশ্বর মাঝি, অধ্যাপক বিনয় সরেন, বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ, কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মহম্মদ অহিদউদ্দিন, সঙ্গীত শিল্পী রথিন কিসকু প্রমুখ থাকছেন ওই অনুষ্ঠানে।

শিবুবাবু বলেন, “আদিবাসীদের সুস্থ সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি তাকে জন সমক্ষে তুলে ধরার অবদানের জন্য উদ্যোক্তাদের এই সংবর্ধনার উদ্যোগ। নিঃসন্দেহ সাধুবাদের।’’

কী বলছেন ওই আদিবাসী প্রধানেরা? এ দিন নীলডাঙার বাসিন্দা ছোটন মুরমু বলেন, “আমাদের সমাজের এমন কু-প্রথা দূর করার জন্য অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তা সত্বেও কিন্ত আমরা হাল ছাড়িনি। ওই সকল আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভাল লাগছে। সকলকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন