পিয়ারসন পল্লিতে ডাইনি অপবাদে মার

শান্তিনিকেতন জুড়ে যখন পৌষমেলার ধুম, তখন এই এলাকারই পিয়ারসন পল্লিতে এক আদিবাসী বধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রহত হয়েছেন ওই বধূর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও। নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁর পরিবারকে ইট, বাঁশ দিয়ে মারধর করেছেন প্রতিবেশীরাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৫
Share:

শান্তিনিকেতন জুড়ে যখন পৌষমেলার ধুম, তখন এই এলাকারই পিয়ারসন পল্লিতে এক আদিবাসী বধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রহত হয়েছেন ওই বধূর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও। নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁর পরিবারকে ইট, বাঁশ দিয়ে মারধর করেছেন প্রতিবেশীরাই।

Advertisement

কেন মারধর? স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামে বুধবার রোগে ভুগে এক শিশুর মৃত্যু হয়। তারপরেই প্রতিবেশীরা অপবাদ দেন, ওই বধূ ‘ডাইনি’। তাঁর জন্যেই মারা গিয়েছে ওই শিশু। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশীদেরই একাংশ ওই বধূর বাড়িতে চড়াও হয়। শুরু হয় মারধর। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

বীরভূম তো বটেই, শান্তিনিকেতনের মতো এলাকায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ বারেবারেই উঠেছে। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ বলছে, নিয়মিত সচেতনতা বাড়ানোর প্রচার চলছে। তার পরও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, বাস্তবের ছবিটা অনেকাংশেই মিলছে না তার সঙ্গে। সম্প্রতি এ রাজ্যে একাধিক ‘ডাইনি’ নির্যাতনের ঘটনায় পঞ্চায়েত, পুলিশ কিংবা প্রশাসনের সামান্য সহায়তাও আক্রান্তরা পাননি বলে অভিযোগ। রাজ্য মহিলা কমিশনও সে কথা স্বীকার করছে।

Advertisement

চলতি বছরেরই মে মাসে মহম্মদবাজারের কানাদিঘি গ্রামে বছর ষাটেকের এক প্রৌঢ়ার উপরে চড়াও হয় এলাকার লোকেরাই। অভিযোগ, গ্রামের মনসা পুজোর ঘটটি ওই প্রৌঢ়া চুরি করেছেন। তিনি ‘ডাইনি।’ ওই প্রৌঢ়াকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীর একাংশের বিরুদ্ধে। তারপরে বহু দিন তাঁকে বাড়ি ফেরানো যায়নি। মেয়ের বাড়িতে থাকছিলেন। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ঘরছাড়া হতে হয় তাঁর ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনিকেও।

২৬ এপ্রিল আবার বোলপুরের রূপপুরের বাসিন্দা এক মহিলাকে কুড়ুল দিয়ে কোপ মারেন তাঁর আত্মীয়েরাই। কেন? পরিবারে এক কিশোর সাপের কামড়ে মারা গিয়েছে। পরিবারের একাংশের অভিযোগ, ওই মহিলাই ‘সাপ হয়ে ওই ছেলেটিকে কামড়েছেন’। পুলিশ, প্রশাসনের একটি অংশের আক্ষেপ, বারবার বলেও একটি অংশকে সচেতন করা যাচ্ছে না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বিষয়টা শুধু কুসংস্কারের নয়। বরং কুসংস্কারকে সামনে রেখে রাজনৈতিক এবং সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্য কাজ করছে। বেশির ভাগ ঘটনার পিছনেই রয়েছে জমি সংক্রান্ত বিবাদ। এবং বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ, আদিবাসী সমাজকে চটাতে চায় না বলেই পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে না। তবে হাল না ছেড়ে দ্রুত পিয়ারসন পল্লিতেও সচেতনতা প্রচার করা হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement