তিন প্রজন্ম খেটেও নেই স্বীকৃতি

শুধু সাদরে আলা কিংবা চিন্তা দলুইরা নন। জেলা, রাজ্যের সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত বহু স্কুলেরই অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা একই অবস্থার শিকার। স্কুল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৩ সালে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মধ্য ইংরাজি স্কুলে মাসিক ৫০ পয়সা বেতনে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেন স্থানীয় যশোদা দলুই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

অপেক্ষা: চিন্তা দলুই (বাঁদিকে)। সাদরে আলা খাঁ নিজস্ব চিত্র

সরকার মুখ তুলে চাইবে। এই আশায় কাটাচ্ছে তিন প্রজন্ম। কিন্তু, অপেক্ষা করতে করতে সাদরে আলা খাঁ, চিন্তা দলুইদের আশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।

Advertisement

শুধু সাদরে আলা কিংবা চিন্তা দলুইরা নন। জেলা, রাজ্যের সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত বহু স্কুলেরই অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা একই অবস্থার শিকার। স্কুল এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৩ সালে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মধ্য ইংরাজি স্কুলে মাসিক ৫০ পয়সা বেতনে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেন স্থানীয় যশোদা দলুই। তার মৃত্যুর পর কাজ শুরু করেন তাঁর এক প্রতিবন্ধী ছেলে ষষ্ঠী দলুই এবং স্ত্রী চিন্তা দলুই। চিন্তা আবার কথা বলতে পারেন না। তখন বেতন হয় মাসে ৫০ টাকা। ১৯৮৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে একই আশায় কাজ শুরু করেন সুশান্ত দলুই।

উচ্চস্তরে উন্নীত হতে হতে স্কুল আজ উচ্চমাধ্যমিক। সুশান্তর বেতন বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ৫০০ টাকা। সেই বেতনে ছয় সদস্যের সংসার চলে না বলে সুশান্ত দলুইকে স্থানীয় কলেজেও অস্থায়ী ঝাড়ুদারের কাজ নিতে হয়েছে। সুশান্তর কথায়, ‘‘সেই ঠাকুমার সময় থেকে শুনে আসছি আমাদের কাজটা স্থায়ী হবে। সেই আশায় কাজ করে চলেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা ভাবে না। কলেজের কাজটা না জুটলে তো না খেয়ে মরতে হত।’’

Advertisement

একই অভিযোগ মাড়গ্রামের বসোয়া গ্রামের সারেমা বিবিরও। তাঁর স্বামী সাদরে আলা খাঁ ১৯৭৫ সালে সংগঠিত বসোয়া বালিকা বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নৈশরক্ষী হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে স্কুলটি জুনিয়র থেকে হাইস্কুলের অনুমোদন পেয়েছে। একই সময়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করা শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরাও সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। স্বীকৃতি জোটেনি কেবল সাদরে আলা খাঁয়ের। জীবনের সেরা সময়টুকু চলে গিয়েছে স্কুল আগলাতে। আর অগোছালো হয়ে গিয়েছে নিজের সংসার। অর্থাভাবে পাঁচ ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে পারেননি। দুই মেয়ের বিয়ে দিতে বিকিয়ে গিয়েছে ঘটিবাটি। এমনকি হারিয়ে ফেলেছেন মানসিক ভারসাম্যও। তবু আজও স্কুলকে ছেড়ে যাননি তিনি। শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে তাঁকে মাসে ৫০০ টাকা দেন। স্ত্রী বলেন, ‘‘অন্য সবাই স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ উনি পাননি। তাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, আজও মনে করেন সরকার এক দিন তাকেও স্বীকৃতি দেবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অধীরকুমার দাস জানান, একটি স্কুল চালাতে ওই কর্মীদের প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তাঁরা অবহেলিত থেকে গিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বেতনটুকুও জোটে না। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলেন, ‘‘বিষয়টি সরকারি নীতি সম্পর্কিত। তাই মন্তব্য করতে পারব না।’’

ক্যাপশন— মাড়গ্রামের বসোয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সাদরে আলা খাঁ ও লোকপাড়া হাইস্কুলের চিন্তা দলুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন