দুই জেলায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি, পুরুলিয়া শহরে মিলল আরও দুই আক্রান্তের খোঁজ
Dengue

জ্বর নিয়ে রোজ জনা কুড়ি ভর্তি মেডিক্যালে

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূলত জুলাই মাস থেকেই ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে জেলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

এক দিকে নিম্নচাপ, অন্যদিকে ডেঙ্গি। পুজোর মরসুম জুড়ে জেরবার বাঁকুড়াবাসী। নিম্নচাপের রেশ কাটলেও ডেঙ্গি থেকে মুক্তি মিলছে না। বাঁকুড়া মেডিক্যালের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনই গড়ে অন্তত কুড়ি জন রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। যাঁদের মধ্যে অনেকেরই রক্ত পরীক্ষা করে মিলছে ডেঙ্গির জীবাণু। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জেলার বাসিন্দারা।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূলত জুলাই মাস থেকেই ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে জেলায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে জেলা জুড়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন ১৯ জন। সংখ্যাটা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায় অগস্টে। ওই মাসে ২৭ জন ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়ে জেলায়।

পুজোর মাস সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯। চলতি অক্টোবরে বুধবার পর্যন্ত গোটা জেলায় ২৩ জন ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়েছে বলে বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

এ বছর বাঁকুড়া পুরশহরে ৮ জন ও বিষ্ণুপুর পুরশহরে ১ জন ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে জেলায় সব থেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রন্ত রোগী মিলেছে ছাতনা ব্লক থেকে। ওই ব্লকে এখনও পর্যন্ত ১৯ জন রোগীর শরীরের মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু। তার পরেই রয়েছে জয়পুর ব্লক (১৮ জন)।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলায় (বাঁকুড়া সদর ও খাতড়া মহকুমা) সংখ্যাটা হল ৭০। এ ছাড়াও জেলার ছ’জন ডেঙ্গি রোগী জেলার বাইরে থেকে চিকিৎসা করানোয় তাঁদের চিহ্নিত করা যায়নি।

কিন্তু এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে যাওয়ায় খানিক স্বস্তি পেয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৩৯। এ বছর বুধবার পর্যন্ত ১২০ জন ডেঙ্গি রোগী পাওয়া গিয়েছে।

এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত কারও মৃত্যুও হয়নি জেলায়। গত বছর জেলার মধ্যে গঙ্গাজলঘাটিতে দু’জন, কোতুলপুর ও তালড্যাংরা ব্লকে এক জন করে, মোট চার জনের ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল।

শীত পড়লে ডেঙ্গি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। ফলে তাঁদের দাবি, সংখ্যাটা আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা অনেক কম, ডেঙ্গিতে মৃত্যুও নেই।”

কোন পদ্ধতিতে সম্ভব হল এটা?

প্রসূনবাবুর দাবি, ডেঙ্গি মূলত শহরকেন্দ্রীক রোগ বলেই ধরা হয়। তাই আগে পুরএলাকা গুলিতেই ডেঙ্গি অভিযান বেশি মাত্রায় চালানো হতো। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর থেকেই আমরা বুঝতে পারি, গ্রামাঞ্চলেও এই রোগের প্রকোপ কোনও অংশে কম নয়। তাই এ বারে প্রথম থেকেই শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও সমান তালে মশার লার্ভা নিধন চলিয়েছি।” তাঁর বক্তব্য, নিয়মিত মশার লার্ভা ধ্বংসের অভিযান, সাধারণ মানুষ ও সকল স্তরের স্বাস্থ্য কর্মী এবং চিকিৎসকদের সতর্কতার জেরেই ডেঙ্গির প্রকোপ এ বারে কমেছে জেলায়।

তবে এখনও যে পরিস্থিতি পুরোপুরি বিপদমুক্ত, তা নয়। ফলে উদ্বেগ কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন