NEET: ইচ্ছে ও পরিশ্রমের জোরে বাধা টপকে সফল দুই ছাত্র

ইচ্ছেশক্তি কোনও কিছুর কাছেই হার মানেনি। নানা সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘নিট’ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন পুরুলিয়া জেলার দুই পড়ুয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার ও হুড়া শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১০
Share:

সমরেশ মণ্ডল এবং ঝুলন মাজি। নিজস্ব চিত্র।

নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু ইচ্ছেশক্তি কোনও কিছুর কাছেই হার মানেনি। নানা সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘নিট’ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন পুরুলিয়া জেলার দুই পড়ুয়া। মানবাজারের নাগদাগোড়া গ্রামের সমরেশ মণ্ডল তফসিলি জাতি বিভাগে ১৭৯ র‌্যাঙ্ক করেছেন, সাধারণ বিভাগে র‌্যাঙ্ক ৯,৩০৩। হুড়ার ঝুলন মাজি র‌্যাঙ্ক করেছেন ২৭,৫৬৩। ওবিসি(বি) বিভাগে তাঁর র‌্যাঙ্ক ১১,৬০৯।

Advertisement

সমরেশের বাবা বিমল মণ্ডল বাইরে রাঁধুনির কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য জমি রয়েছে। দুই ছেলে ও স্বামী-স্ত্রী মিলিয়ে চার জনের সংসার তাতে চলে না।’’ সমরেশের মা রীতা মণ্ডল বলেন, ‘‘ছোটবেলায়কাকার কাছে পুরুলিয়ার জয়পুর থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা করে সমরেশ। পরে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পুরুলিয়ার নবোদয় স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়।’’ পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে নিট পরীক্ষায় বসে আশানুরূপ ফল হয়নি সমরেশের। স্কুল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুণের একটি কোচিং কেন্দ্রে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পায়। সমরেশ জানান, সেখানে ৯ মাস পড়াশোনা করে ফের এ বার পরীক্ষায় বসেন।

মানবাজারের বিএমওএইচ জিৎ সরকার বলেন, ‘‘সমরেশ ভাল ফল করেছেন। দেশের যে কোনও এইমস থেকে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেতে পারেন তিনি।’’ নাগদাগোড়ার বাসিন্দা, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য সমীর মণ্ডল বলেন, ‘‘সমরেশ মানবাজার মহকুমার মুখ উজ্জ্বল করেছেন।’’ সমরেশ বলেন, ‘‘এইমসের ভুবনেশ্বর শাখায় পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। কার্ডিওলজিস্ট হওয়া লক্ষ্য।’’ পুরুলিয়ার নবোদয় স্কুলের অধ্যক্ষ রাজেন কুমার বলেন, ‘‘সমরেশ অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী। আমাদের আশা, ও অনেক দূর এগোবে।’’

Advertisement

চলতি বছরেই হুড়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন ঝুলন। তাঁর কথায়, ‘‘যে দিন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম, সে দিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, নিট পরীক্ষায় বসব। প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম।’’ তাঁর বাবা অসংগঠিত ক্ষেত্রের ব্যবসায়ী। প্রতি মাসে রোজগারের কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই এই পরীক্ষার জন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়নি ঝুলনের। বাবা কৃষ্ণপদ মাজি বলেন, ‘‘পরিবারের পেশা বলতে চাষ-আবাদ। সংসার চালাতে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। গ্রামে ব্যবসায় আর কতটুকু রোজগার! কোনও কোনও মাসে রোজগারই হয় না।’’

ঝুলন বলেন, ‘‘কোনও প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। নিটে বসার জন্য কিছু বইপত্র কিনেছিলাম। স্কুলের শিক্ষকেরা সহায়তা করেছেন। ঠিক করেছিলাম, প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখব না। সেই লক্ষ্যে ৮-১০ ঘণ্টা সময় দিতাম।’’

হুড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু দে বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের দু’টি ছাত্র এ বার নিট পরীক্ষার সর্বভারতীয় মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সায়ন কর ৩৫৯ র‌্যাঙ্ক করেছে। ঝুলনের র‌্যাঙ্ক সাতাশ হাজারের আশপাশে। দু’জনই প্রমাণ করেছে, ইচ্ছে ও পরিশ্রম করলে সাফল্য আসে।’’ ভাইফোঁটার দিন হুড়ার দুই কৃতীকে সম্মানিত করেছে স্থানীয় নাগরিক মঞ্চ। মঞ্চের তরফে সত্যদাস কুণ্ডু, নৃপেন কর, গৌতম কুণ্ডুরা বলেন, ‘‘ওঁদের সাফল্যেই এ বার আমাদের উৎসব আলোকিত হয়েছে।’’

ঝুলন বলেন, ‘‘এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন