তৃণমূল ছেড়ে দু’জন সেই বিজেপিতেই

এলাকার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষজনের একাংশের দাবি, গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেই পিছু হটলেন ওই দুই সদস্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৩
Share:

ফেরা: বিজেপির পতাকা হাতে। শুক্রবার রামপুরে। নিজস্ব চিত্র

যত কাণ্ড রামপুরে!

Advertisement

‘টাই’ হওয়া এই গ্রাম পঞ্চায়েত ঘিরে আক্ষরিক অর্থেই দড়ি টানাটানি চলছে তৃণমূল এবং বিজেপি-র। এক বার এ পক্ষ বাজি মারল, তো তার পরেই পাল্টা দিল অন্য পক্ষ। মহম্মদবাজার ব্লকের এই পঞ্চায়েতের ফল ছিল ৩-৩। বিজেপি-র তিন আসন। তৃণমূলেরও তিন। তিন দিন আগে বিজেপি-র দুই পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় মনে হচ্ছিল, রামপুর পঞ্চায়েতে শাসকদলের বোর্ড গঠন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু, তিন দিনেই নাটকীয় পরিবর্তন! তৃণমূলে যোগ দেওয়া দুই নির্বাচিত সদস্য সুলতা কোঁড়া ও জপন মুখোপাধ্যায় শুক্রবার ফের বিজেপি-তে ফিরলেন। বিজেপি-র পতাকা হাতে তুলে নিয়ে তাঁরা বললেন, ‘‘ভুল করেছিলাম।’’

ফলে, রামপুর পঞ্চায়েতে এখন আবার দু’দলের ‘টাই’!

Advertisement

যদিও এলাকার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষজনের একাংশের দাবি, গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেই পিছু হটলেন ওই দুই সদস্য। কারণ, দলবদল করার পর থেকেই তাঁদের উপরে বিজেপি-র ‘চাপ’ ছিল। সুলতার স্বামীও বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ি ফেরেননি। অভিযোগ, দলছাড়া ওই দুই পঞ্চায়েত সদস্য বিশেষ করে সুলতার বাড়ি ঘিরে রেখেছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল পুলিশও। কিন্তু, শেষ বেলায় ‘অ্যাডভান্টেজ’ বিজেপি-রই।

সেটা অবশ্য আড়ালে মানছেন রামপুর অঞ্চলের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের সঙ্গে বহু লড়াই করে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে মনোনয়ন জমা দিয়ে ওই দু’জনকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো এবং জেতানো হয়েছিল। তার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একারা এক সক্রিয় বিজেপি কর্মী দাবি করছেন, ‘‘যাঁদের ভোটে ওঁরা জিতেছেন, তাঁদের অন্ধকারে রেখে শাসকদলের চাপ ও প্রলোভনে এ ভাবে দলবদল করা কেউই মেনে নিতে পারেননি। ওঁরা অনৈতিক কাজ করেছেন, সেটা ওঁদের বলা হয়েছিল। দু’জনই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য ফণীরঞ্জন রায় এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ সুলতার বাড়ির উঠোনে তাঁর এবং জপন মুখোপাধ্যায়ের হাতে দলীয় পাতাকা তুলে দেন। জপনবাবু বলেন, ‘‘আমরা স্বেচ্ছায় তৃণমূলে গিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি ভুল করেছি। তাই ফিরে এলাম বিজেপিতে।’’

বীরভূমের ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করেছিল। ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর ১, মহম্মদবাজার ব্লকের গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত— দু’টিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। তা নিয়ে অস্বস্তি ছিল শাসকদলে। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানাটানি চলছিল ৩-৩ আসনে টাই হয়ে যাওয়া রামপুর পঞ্চায়েত নিয়ে। অভিযোগ, টস-এর আগেই বিপক্ষের প্রার্থীকে নিজের ঘরে তুলে পঞ্চায়েতের দখল নিতে উঠে-পড়ে লেগেছিল যুযুধান দুই পক্ষ। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল।

গত মঙ্গলবার সুলতা ও জপনবাবু বোলপুরে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। বোলপুরে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর দাবি ছিল, ‘‘নির্বাচনে রামপুরে বিজেপির হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, সকলেই তৃণমূলের। স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ বা ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাঁরা সেই সময় বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন। এ দিন ঘরের লোক ঘরে ফিরলেন।’’

এ দিন ওই দু’জনকে বিজেপি ফের নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার পরে বিকাশবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় খবরটা পেলাম। ভয় দেখিয়েই বিজেপি নিশ্চয় এ কাজ করেছে।’’ যা শুনে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘ওই ট্যাবলেট তৃণমূল ব্যবহার করে। কিন্তু, মজার বিষয়, রামপুরে আমাদের দুই জয়ী সদস্যের ক্ষেত্রে সেই ওষুধ কাজ করেনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন