দুর্ঘটনায় মৃত্যু দুই বরযাত্রীর

বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই পুলিশ কর্মীর। রবিবার ভোর রাতে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে নিতুড়িয়া থানা এলাকায় মেকাতলা গ্রামের মোড়ের অদূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০২:১৯
Share:

পিতৃহীন: আত্মীয়ের কোলে শিবশঙ্কর দাসের মেয়ে তিয়াসা। নিজস্ব চিত্র

বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই পুলিশ কর্মীর। রবিবার ভোর রাতে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে নিতুড়িয়া থানা এলাকায় মেকাতলা গ্রামের মোড়ের অদূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহত হয়েছেন গাড়ির চালক-সহ আরও ১১ জন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি এমনই দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল যে পুলিশকে গ্যাস কাটার ও অন্য যন্ত্র ব্যবহার করে আহত ও মৃতদের বের করতে হয়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই পথ দুর্ঘটনায় মৃতেরা হলেন শিবশঙ্কর দাস (৩৫) ও নীতিন শাণ্ডিল (৩৬)। দু’জনেই পুরুলিয়া শহরের চকবাজারের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে ছ’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুরুলিয়া শহররেই চকবাঁধ এলাকার এক বাসিন্দার বিয়েতে আসানসোলে পাঁচগাছিয়াতে বরযাত্রী গিয়েছিলেন ওই ১৩ জন। শনিবার বিকেলে গাড়ি করে পুরুলিয়া শহর থেকে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। ঠিক ছিল, বিয়ে শেষ হলে রাতেই পুরুলিয়া ফিরে আসবেন সবাই।

Advertisement

সেই মতো আসানসোল থেকে গভীর রাতে গাড়ি নিয়ে পুরুলিয়ার পথ ধরেন। পুলিশ জানিয়েছে, মেকাতলা গ্রামের মোড়ের অদূরে রাস্তার পাশেই একটি ট্রাক খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বরযাত্রীদের গাড়ির চালক সেই ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিবশঙ্কর ও নীতিনের।

রাজ্য সড়কে পুলিশর টহলদারি ভ্যান বাকিদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় হারমাড্ডিতে নিতুড়িয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁদের রেফার করা হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।

এ দিন হাসপাতালে শুয়ে জখম চন্দন দত্ত বলেন, ‘‘অনেক রাত হওয়ায় গাড়ির মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ আর ঝাঁকুনি। তার পরে আর কিছু মনে নেই।” পুলিশের অনুমান, চলন্ত গাড়িতে চালক ঘুমিয়ে পড়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলেন শিবশঙ্কর ও নীতিন। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

এ দিকে একই পাড়ার দু’জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরুলিয়া শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের ভাঁটবাঁধ মোড় এলাকায়। প্রতিবেশীরা জানান, শিবশঙ্কর ও নীতিন দু’জনেই বাল্যবন্ধু। এলাকায় সবাই দু’জনকে হরিহর আত্মা বলেই জানতেন। মাঠে যাওয়া, চাকরির পরীক্ষা— সব কিছুই পাশাপাশি বাড়ির দুই বন্ধু এক সঙ্গে করতেন। প্রতিবেশীদের আক্ষেপ, দুই বন্ধুর মৃত্যুও জড়িয়ে গেল একসঙ্গে।

শিবশঙ্কর ও নীতিন, দু’জনেরই চার বছরের মেয়ে রয়েছে। শিবশঙ্কর আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশেনারেটে ও নীতিন পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বন্ধুর ভাগ্নের বিয়ে উপলক্ষে শুক্রবারই ছুটি নিয়ে দু’জনে পুরুলিয়া ফিরেছিলেন। এ দিন তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অঝোরে কেঁদে চলেছেন শিবশঙ্কর ও নীতিনের স্ত্রী ও আত্মীয়েরা। ময়না তদন্তের পরে দুপুরে দেহ দু’টি নিয়ে আত্মীয়রা পাড়ায় ফেরেন। গোটা পাড়া ভেঙে পড়ে ওই দুই যুবকের বাড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন