রিজ়ার্ভার ভাঙায় পদক্ষেপ, দুই আধিকারিককে পাঠানো হল ছুটিতে

২০১৬ সালে সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে সাত লক্ষ লিটার ধারণক্ষমতার ওই রিজ়ার্ভার তৈরি করা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও খাতড়া শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৬
Share:

বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে এ ভাবেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে প্রায় সাত লক্ষ লিটারের জলাধার। ফাইল চিত্র

সারেঙ্গায় রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার ঘটনায় দুই আধিকারিককে ‘কমপালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠাল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। ওই দুই আধিকারিকের মধ্যে এক জন সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও এক জন এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার। সেই সঙ্গে দ্রুত ওই রিজ়ার্ভার নিজস্ব খরচে গড়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থাকে।

Advertisement

রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তবে ওই রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। দফতরের যে আধিকারিকদের নজরদারিতে ওই কাজ হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, নির্মাণকারী সংস্থাকে নিজ খরচে ফের সেখানে রিজ়ার্ভার গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার প্রকৃত কারণ জানতে নির্মাণ সামগ্রীর পরীক্ষা করা হবে।

২০১৬ সালে সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে সাত লক্ষ লিটার ধারণক্ষমতার ওই রিজ়ার্ভার তৈরি করা হয়েছিল। গত ২২ জানুয়ারি হুড়মুড় করে তা ভেঙে পড়ে। কেউ হতাহত হননি। কিন্তু তৈরির চার বছরের মধ্যে রিজ়ার্ভারটি ভেঙে পড়ায় নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাটিকে সামনে রেখে বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওই প্রকল্পে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।

Advertisement

ঘটনার পরেই তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে রাজ্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। ২৩ জানুয়ারি দফতরের তিন সদস্যের তদন্তদল ফতেডাঙায় গিয়ে নির্মাণকাজের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। সোমবার এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রীর কাছে জমা দেন তদন্তকারীরা। তার পরেই মন্ত্রী ওই দুই আধিকারিককে ‘কমপালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এই পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মন্ত্রীর দাবি, ওই দুই আধিকারিক সারেঙ্গায় জলপ্রকল্পের কাজ চলাকালীন বাঁকুড়া জেলার দায়িত্বে ছিলেন। কাজটি দফতরের নজরদারিতে হয়েছিল। তাই এই পদক্ষেপ। মন্ত্রী বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে কোনও ধরনের গাফিলতি আমাদের সরকার বরদাস্ত করবে না। দফতরের নজরদারিতে হওয়া কাজের এমন হাল হবে কেন?’’ মন্ত্রী জানান, তৎকালীন সময়ে বাঁকুড়া জেলায় থাকা জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার কয়েকজন অফিসার বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তদন্তে দরকার হলে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হবে। ফতেডাঙার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে দফতর তৎপর হয়েছে দাবি করে সৌমেনবাবু বলেন, “রাজ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আওতায় যা রিজ়ার্ভার আছে, সব ক’টির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পনেরো দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”

বাঁকুড়া জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাদের অধীনে প্রায় ১৭৭টি রির্জ়াভার রয়েছে। তবে সমস্ত রিজ়ার্ভারের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট চেয়ে কোনও নির্দেশিকা মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় আসেনি বলেই জানিয়েছেন দফতরের সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুজয় বারুই। তিনি বলেন, “আমরা তিনটি মহকুমার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে আগেই নিজ নিজ এলাকার রিজ়ার্ভারগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে বলেছি। রাজ্য থেকে নির্দেশিকা এলেই দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’

এ দিকে ফতেডাঙার ওই রিজ়ার্ভারের ধংসস্তূপ এখনও একই ভাবে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার পর দিন থেকেই অবশ্য জল মিলছে। তবে গ্রামের বাসিন্দা হেমাল মুর্মু, রূপচাঁদ মান্ডিরা বলেন, “জল পাচ্ছি ঠিকই। তবে যত তাড়াতাড়ি রিজ়ার্ভার তৈরি করা হয়, ততই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন