কুখুডিহিতে ধৃত দু’পক্ষের ১৪

অশান্তির মূলে কি বালি, প্রশ্ন

সিউড়ির কুখুডিহি গ্রামে বোমাবাজি, মারধর ও ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রামেরই দু’পক্ষের মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনার পরে এখনও অশান্ত গ্রাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০১:৪১
Share:

তদন্ত: সিউড়ির কুখুডিহি গ্রামে তখনও ভাসছে বোমা (চিহ্নিত জায়গা)। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সিউড়ির কুখুডিহি গ্রামে বোমাবাজি, মারধর ও ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রামেরই দু’পক্ষের মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনার পরে এখনও অশান্ত গ্রাম। বুধবার ওই গ্রামে একটি বোমা ফেটে দুই শিশু আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ। ধৃতদের মধ্যে এক জন চিকিৎসাধীন থাকায় ১৩ জনকে বুধবার সিউড়ির সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অলিভিয়া রায় তাঁদের ২৩ মে পর্যন্ত ধৃতদের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

গ্রামে মাদক কারবারের বাড়বাড়ন্ত দেখে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিরোধিতার মুখে ভাটা পড়ছিল ওই কারবারে। তারই বদলা নিতে সিউড়ি ১ ব্লকের ওই গ্রামে মাদক কারবারিরা তুলকালাম চালায় বলে অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর একাংশের। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছিলেন স্থানীয় ক্লাবকেও। সেই ‘আনকমন’ ক্লাবের সদস্যদের দাবি, বেআইনি কারবারের বিরোধিতা করতে তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। অথচ পুলিশ আসল দোষীদের ছেড়ে ক্লাবের সাত সদস্যকেই গ্রেফতার করেছে।

ঘটনার দিনই পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, বোমবাজি, মারধর ও ঘর ভাঙচুরের পিছনে শুধু মাদকের কারবার নয়, অন্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে। কী সেই কারণ? তার প্রেক্ষিতেই কি নুতন করে ছ’জনকে গ্রেফতার? জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার সেটা ভাঙতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেই গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

Advertisement

এলাকার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, ‘‘গত ক’দিনে যা হয়েছে তাতে মাদক উপলক্ষ মাত্র। অশান্তির মূলে রয়েছে বালি কারবারের রাশ নিজেদের হাতে রাখার লড়াই।’’ এলাকায় কান পাতলেও তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। পুলিশের একটি সূত্রেও জানা গিয়েছে, তরুণ প্রজন্ম নেশার কবলে পড়ছে, এটা ঠিক। কিন্তু বিবাদের নেপথ্যে রয়েছে বালি। গ্রামের অদূরে থাকা মযূরাক্ষী নদী থেকে বালি তোলা নিয়ে কিছু দিন আগেই এলাকায় অশান্তি হয়েছে। বালি তোলার বরাত পাওয়া দুই ঠিকাদার গ্রামের কিছু লোককে কাজে লাগায়। পূর্ব পাড়া ও পশ্চিম পড়ার লোকজন দু’পক্ষে কাজ পেয়েছিল। কিন্তু রাস্তা ব্যবহার করা নিয়ে অশান্তির পর থেকে প্রশাসন বালি তোলায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কার্যত দু’পক্ষই কাজ হারিয়েছে। ওই তৃণমূল নেতা মানছেন, ‘‘এখন যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দুর্বল করে দিতে পারে তা হলে বালির কারবার চালু হলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে অন্য গোষ্ঠীর হাতে। বিবাদের পিছনে সেটাই কারণ।’’

এ দিকে, পশ্চিম পাড়ার লোকেদের দাবি পূর্ব পাড়ার লোকেদের ফেলে রাখা বোমায় জখম হয়েছে দুই শিশু। তারা সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দিন তৃণমূলের পতাকা নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন পশ্চিম পাড়ার মহিলারা। ফুলি বিবি, কাহাড়া বিবি, রেনুকা বিবিদের ক্ষোভ, ‘‘মাদকের কোনও বিষয় নয়। পূর্ব পাড়ার ক্লাব ও কিছু বাসিন্দার হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা।’’ কেন সংবাদমাধ্যম এক তরফা খবর করেছে, তা নিয়ে খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়েও বিক্ষোভের মুখে পড়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। তবে শিশু দু’টি আদৌ কতটা জখম? হলেও আঘাতের পরিমাণ কতটুকু? সে নিয়ে সিউড়ি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের সন্দেহ রয়েছে। একই দাবি পূর্ব পাড়ার কিছু বাসিন্দা ও ক্লাব সদস্যদেরও। তাঁরা বলছেন, ‘‘শিশু দু’টিকে ঢাল করে ফাঁসানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন