শংসাপত্র বাতিলেই উত্তেজনা

এলাকায় সকাল থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় পুলিশ এবং ইএফআর জওয়ানেরা মোতায়েন ছিলেন। তাতেও অশান্তি ঠেকানো গেল না জয়পুরের ঘাগরা পঞ্চায়েতে। ব্লকের অন্য তিনটি পঞ্চায়েতে বিজেপি শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গড়লেও ঘাগরায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

সাঁতুড়ি থানার আহত পুলিশকর্মীর চিকিৎসা চলছে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।ছবি: সঙ্গীত নাগ

এলাকায় সকাল থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় পুলিশ এবং ইএফআর জওয়ানেরা মোতায়েন ছিলেন। তাতেও অশান্তি ঠেকানো গেল না জয়পুরের ঘাগরা পঞ্চায়েতে। ব্লকের অন্য তিনটি পঞ্চায়েতে বিজেপি শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গড়লেও ঘাগরায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। সোমবার সেখানেই পুলিশের গুলিতে তাঁদের দুই সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের পরে পরেই বলরামপুরে দুই বিজেপি কর্মীর রহস্য-ম়ৃত্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল। এ দিন বোর্ড গড়াকে কেন্দ্র করে দুই দলীয় সমর্থকের মৃত্যুর পরেও শাসকদল এবং পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি সমালোচনার সুর তীব্র করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা।

Advertisement

ঘাগরা পঞ্চায়েতের মোট আসন ১১টি। এ বারের ভোটে তৃণমূল জিতেছে ৩টি আসনে। বিজেপি পেয়েছে ৩টি। সিপিএমও ৩টি। ফব এবং নির্দল প্রার্থী জিতেছেন একটি করে আসনে। বিরোধী এবং নির্দল প্রার্থীরা ৮ জন মিলে বোর্ড তৈরি করতে যান। তবে পঞ্চায়েতের প্রধানের পদটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বোর্ড গঠনের সময়ে পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে চাপানউতোর শুরু হয়। বিরোধীদের তরফে তার দাবিদার ছিলেন বিজেপির অদীপ মণ্ডল। তৃণমূলের বোর্ড গড়ার মতো আসন ছিল না। তবে তফসিলি জাতির জয়ী সদস্য রয়েছেন। বিজেপির দাবি, অদীপকে প্রধান হতে না দিলে পঞ্চায়েতের রাশ নিজেদের হাতে চলে আসবে বলে বুঝেছিল শাসকদল। অভিযোগ, সেই মতো ঘুঁটি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল।

বিজেপির জয়পুর মণ্ডল সভাপতি রবীন সিংহদেও জানান, বোর্ড গঠনের সময়ে প্রশাসনের প্রতিনিধি দাবি করেন অদীপের জাতিগত শংসাপত্র অবৈধ। অথচ ওই শংসাপত্র দেখিয়েই মনোনয়ন জমা করেছেন অদীপ। এই নিয়ে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। তারই রেশ ছড়ায় বাইরে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, পঞ্চায়েত অফিসের বাইরে তখন বিজেপি এবং অন্য বিরোধী কর্মী-সমর্থক মিলিয়ে হাজার তিনেক লোক জমায়েত করেছিলেন। গোড়ায় তৃণমূলের শ’দেড়েক কর্মী সমর্থক ছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা সরে যান। বিজেপি নেতাদের দাবি, গণ্ডগোল হতে পারে ভেবে কর্মীদের আগে থেকেই প্ররোচনায় পা না দেওয়ার জন্য তাঁরা সতর্ক করে রেখেছিলেন। কিন্তু উত্তেজনার মধ্যে পুলিশ প্রথমে অল্প সময়ের জন্য লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাস চালিয়ে শুরু করে গুলি ছোড়া। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিরঞ্জন গোপের (৩০)। গুরুতর জখম অবস্থায় আরও চার জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় দামোদর মণ্ডল (৫৯) নামে এক জনের। বিজেপির দাবি, নিরঞ্জনের দেহ পুলিশ তুলতে গেলে উপস্থিত লোকজন বাধা দেন। তাতে আর এক প্রস্ত লাঠি চলে।

Advertisement

বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি ছিল। পুলিশও ছিল প্রচুর। তার পরে কী এমন ঘটল যে গুলি চালাতে হল? গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং থাকার কথা। সেটা প্রকাশ্যে আনা হোক।’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘পুলিশের পোশাক পরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই এ সব ঘটাচ্ছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা উচিত।’’

তৃণমূলের দাবি, ঘটনায় তাঁদের দলের কারও কোনও যোগ নেই। জেলা তৃণমূল নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে আমাদের মাত্র তিন জন জিতেছেন। বিরোধীরাই বোর্ড গঠন করতে যাচ্ছিল। কে প্রধান হবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।’’

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া দাবি করেছেন, পুলিশ শুধু শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। সেই গুলিতে কারও মৃত্যু হয়নি। তাঁর দাবি, নিরঞ্জনের দেহ পুলিশ গ্রামের ভিতর থেকে উদ্ধার করেছে। অন্য জনকে কারা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। এক ইএফআর জওয়ানও এ দিন আহত হয়েছেন বলেও পুলিশের দাবি।

গোটা ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ও। তিনি শুধু বলেন, ‘‘ঘাগরা পঞ্চায়েতে বিজেপির এক সদস্যের জাতিগত শংসাপত্র অবৈধ। তাঁর ঝাড়খণ্ডের ভোটার তালিকায় নাম আছে। এখানের ভোটার তালিকাতেও রয়েছে। স্ক্রুটিনির পরে আমরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে এটা জেনেছি। শংসাপত্র যে অবৈধ সেটা আগেই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন