আগুন নেভানোর চেষ্টা। মহম্মদবাজারে গণপুরের জঙ্গলে। শুক্রবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
মহম্মদবাজার ব্লকের গণপুরের ডামড়া জঙ্গলে হঠাৎ আগুন লাগল। তা দেখে আতঙ্ক ছড়ায় আশেপাশের এলাকায়। গণপুরে প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমির উপরে রয়েছে এই শালের জঙ্গল। তার মধ্যে বিঘে দু’য়েক এলাকায় আগুন লাগার খবর নজরে আসে শুক্রবার ন’টার দিকে। ঘণ্টা দু’য়েক পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলে প্রায়ই এ ভাবে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। গরমের শুরুতেই রোদ চড়তে শুরু করেছে। বসন্তের ঝড়াপাতাও পড়ে রয়েছে জঙ্গলে। সঙ্গে বইয়ে হাওয়া। তাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। জঙ্গল লাগোয়া যে সব গ্রাম রয়েছে, সেখানকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেননা যে কোনও সময় আগুন চলে আসতে পারত বাড়ির দোরগোড়ায়। ঘটে যেতে পারত বড় দুর্ঘটনা।
কিন্তু, কী ভাবে লাগল এই আগুন? কে এর জন্য দায়ী তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে আতান্তরে বন দফতরও। বিট অফিসার অজিত হাজরা বলেন, ‘‘প্রতিবছর এই সময় জঙ্গলে আগুন দেখতে পাওয়া যায়। শুক্রবার সকালেই আগুন দেখা যায় ডামড়া জঙ্গলে। সেখানে আগুন নেভানোর কাজ শেষ হতেই আবার খবর পাই গণপুর জঙ্গলে আগুন জ্বলছে। দু’একদিন অন্তর এই আগুন নেভাতে হয় আমাদের। অনুমান, এই আগুন বাইরের কেউ লাগায় না। স্থানীয় মানুষদের কেউ ইচ্ছে করে বা অজ্ঞানতাবশত এ আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই সময়টা জঙ্গলের মহুয়া ফলের সময়। জঙ্গলে এত পাতা পড়ে থাকে যে, তার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না মহুয়া ফল। এলাকার যে সমস্ত মানুষেরা এই ফল কুড়াতে আসেন, তাঁদের কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলেই অনেকের অনুমান। আগুন লাগার ফলে জঙ্গলে পড়ে থাকা সমস্ত পাতা এবং ছোট ছোট গাছের অনেক পুড়ে যায়। তার পরে মহুয়া ফল কুড়োতে সুবিধা হয়।
এ দিকে, লাগাতার আগুন লাগার ফলে কমতে শুরু করেছে জঙ্গলের মধ্যে থাকা পশু, পাখি। আগে প্রায়ই দেখা যেত জঙ্গলের মধ্যে খরগোশের বাচ্চা, বিভিন্ন ধরনের পাখি, অনেক সাপ। এখন আর তা দেখতে পাওয়া যায় না। অনেকেরই জীবন জীবিকা নির্ভর করে এই জঙ্গলের ছোট ছোট শাল গাছের পাতা তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। এই আগুন লাগার ফলে সব পাতা পুড়ে যায়। যার ফলে ব্যাহত হয় ওই সমস্ত পরিবারদের জীবিকা নির্বাহ।
এ দিনের আগুনের পিছনেও তেমন কিছু একটা হয়েছে বলেই বন দফতরেরও সন্দেহ। অনুমান, কেউ কোনও একটা জায়গায় আগুন লাগিয়ে চলে যায়। সেই আগুন প্রায় বিঘে দু’য়েক জমিতে ছড়িয়ে পড়ার পরে খবর আসে বন দফতরে।
দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আগুন নেভাতেও অনেক সময় লাগে। কারণ, হাতে করে নেভানো হয় জঙ্গলের আগুন। জঙ্গলের মধ্যে এত গাছ থাকে যে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে পারে না। তাই দমকল নয়, বন দফতরের কর্মীদের দিয়েই নেভাতে হয় আগুন। ছোট ছোট গাছের ডাল কেটে নিয়ে তা চাপা দিয়েও আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়।’’ এ দিনও তেমনটাই হয়েছে।