চাই সিবিআই, একজোট গ্রাম

হাতে প্ল্যাকার্ড। কোনওটিতে লেখা—‘ফুলের মতো শিশুকে যারা খুন করল, তাদের শাস্তি চাই’। আবার কোনওটিতে লেখা ‘নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তারাপীঠ শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০১:২৫
Share:

তারাপীঠ থানার সামনে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

হাতে প্ল্যাকার্ড। কোনওটিতে লেখা—‘ফুলের মতো শিশুকে যারা খুন করল, তাদের শাস্তি চাই’। আবার কোনওটিতে লেখা ‘নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে’।

Advertisement

প্রায় এক মাস হতে চললেও তারাপীঠের গ্রামে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। তারই প্রতিবাদে সোমবার তারাপীঠ থানার সামনেই এ ভাবেই গর্জে উঠলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এত দিন পরেও খুনিরা কেউ কেন ধরা পড়ল না, তা নিয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। পাশাপাশি সিআইডি তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তাঁরা। রীতিমতো ধ্বস্তাধ্বস্তি বেঁধে গেল পুলিশের সঙ্গেও। গ্রামের একরত্তি মেয়ের খুনের বিচার চেয়ে এ ভাবেই একজোট হতে দেখা গেল আস্ত গ্রামকে। পরে পুলিশ কর্তার কাছ থেকে অপরাধীদের দ্রুত ধরার আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।

গত ৩ জুন রাতে তারাপীঠ থানা এলাকার একটি গ্রামে নিজের বাড়ি থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় ঘুমন্ত ওই শিশুকন্যাটি। রাতভর তল্লাশি চালানোর পরে মেয়েটির খোঁজ মেলে বাড়ির অদূরে মাঠের ধারে একটি অস্থায়ী খড়ের ছাউনি থেকে। প্রাথমিক তদন্ত পুলিশের অনুমান, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই নাবালিকাকে। খুনের পরে ছাউনিতে ফেলে দেওয়া হয় দেহটি। ঘটনার পরেই রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-কে দিয়েছেন। সিআইডি-র দল একাধিক বার গ্রামে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নিহতের পরিবারের সদস্যদেরও। পরে গ্রামে তদন্তে গিয়েছে ফরেন্সিক দলও। কিন্তু, ঘটনার প্রায় এক মাসের মাথায় দাঁড়িয়েও খুনের কিনারা হয়নি। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। তা নিয়েই ক্ষোভের পারদ চড়ছিল এলাকায়। সম্প্রতি বাম ও কংগ্রেস এবং পরে বিজেপি-র পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় থানা ঘেরাও-সহ নানা কর্মসূচিও নেওয়া হয়। এ বার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে একজোট হলেন গ্রামবাসীও।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে ঢ্যাড়া পিটিয়ে শনিবারই বাসিন্দারা মিলিত হয়েছিলেন গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপে। সেখানেই ঠিক হয় আর অপেক্ষা নয়। এ বার পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই হবে। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে এ দিনের থানা ঘেরাও কর্মসূচি। তার জন্য গ্রাম থেকেই থানায় যাওয়ার জন্য ট্রাক্টর, যন্ত্র চালিত ভ্যানরিকশা ভাড়া করা হয়। দশ, বিশ টাকা চাঁদা দিয়ে ভাড়ার খরচ দেন গ্রামের মানুষই। গ্রামের এক সদস্যের কথায়, ‘‘জলজ্যান্ত একটা মেয়ে ঠাকুমার পাশে ঘুমোল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেউ তাকে ধর্ষণ করে খুন করে ফেলল। এই নৃশংসতা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন ঘটনার পরেও পুলিশের কাউকে ধরতে না পারাটাও ক্ষমার অযোগ্য।’’ সেই ক্ষোভ থেকেই তাঁরা থানায় গিয়ে ঘেরাও-বিক্ষোভের পথ বেছে নেন। তবে, আশ্বাস মতো কাজ না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকিও দেন তাঁরা।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ দিন সকালে নিহতের মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাসিন্দারা তারাপীঠ থানায় অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি ও কথা কাটাকাটিতেও জড়িয়ে পড়েন। অনেকে রাস্তাতেও বসে পড়ে স্লোগানে স্লোগানে নিজেদের প্রতিবাদ জানান। শেষমেষ এসডিপিও (রামপুরহাট) ও সিআই-এর (রামপুরহাট) কাছ থেকে ঘটনার দ্রুত কিনারার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনকারী গ্রামে ফিরে যান। ফেরার আগে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আমরা সিবিআই তদন্ত চাই। সিবিআই-ই মেয়ের খুনিকে ধরতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন