অনুশীলন। —নিজস্ব চিত্র ।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক মঞ্চে, এ বার ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া।
সব ঠিক ঠাক থাকলে, চলতি বছর ১৯ থেকে ৩০ অগস্ট পর্যন্ত চিনের তাইপেইতে চলা ওই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘তাই চি কোয়ান’ প্রতিযোগিতায় ভাগ নেবেন শারীর শিক্ষা বিভাগের ছাত্র সত্যনারায়ণ সিংহ। স্নাতক স্তরের পড়ুয়ার এমন সফলতায়, স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বিশ্বভারতী। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, “আমাদের অনেক কৃতী ও মেধাবী পড়ুয়া রয়েছে। যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের হয়ে বিশ্বভারতীকে তুলে ধরছে। তারাই বিশ্বভারতীর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনবে বলে আসা রাখি এবং তাদের সাফল্য কামনা করি।”
বিশ্বভারতীর বিনয়ভবনের শারীর শিক্ষা বিভাগের স্নাতক উত্তীর্ণ ছাত্র সত্য নারায়ণ সিংহ অল ইন্ডিয়া ইন্টার ইউনিভার্সিটি উশু (All India Inter University) প্রতিযোগিতার পুরুষ বিভাগে একই ইভেন্টে রৌপ্য পদক পেয়েছিলেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পঞ্জাবের পাতিয়ালা এন আই এস সেন্টারে জাতীয় স্তরের তিন প্রতিযোগিতার স্বর্ণ এবং রৌপ্য পদক প্রাপ্ত ৫ প্রতিযোগীকে হারিয়ে সিলেকশন ট্রায়েলে চাম্পিয়ন হয়েছে।
এবং ‘তাই চি কোয়ান’ বিভাগে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের হয়ে পুরুষ বিভাগে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি, সুভাষপল্লির বাসিন্দা সত্য নারায়ণ সিংহ প্রতিদ্বন্দিতা করছে। এ দিন সত্য নারায়ণ বলেন, ‘‘তাই চি কোয়ান’ এমন একটি বিষয় যেখানে একদিকে যেমন মেডিটেশন হয়। অন্যদিকে এটিকে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যবহার হয়। নিয়ম নীতি মেনে যখন ধীরে ধীরে অনুশীলন করা হয়, তখন মেডিটেশন বলা হয়। এবং যখন দ্রুত অনুশীলন করা হয়, তখন আত্মরক্ষা বা সেলফ ডিফেন্স কাজে আসে। তারই প্রতিযোগিতা হচ্ছে চিনের তাইপেইতে।’’
সফলতার কথা বলতে গিয়ে সত্যনারায়ণ বলেন, “এমন স্তরে ওঠার আগে বাবা শিবশঙ্কর সিংহের কাছে ছোট বয়সে প্রথমে হাতে খড়ি মেডিটেশনের পাঠ। দাদা ইন্দ্রনীল সিংহের কাছে তাইকোনডো প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর, কলকাতার প্রশিক্ষক গৌরব শেঠের কাছে ‘তাই চি কোয়ান’ প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পাঠ শেষ করেছি।’’ তিনি জানান, শারীর শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তা মণিমুকুট মিত্র, উপ অধিকর্তা সুদর্শন বিশ্বাসের সহযগিতা এবং শ্রীনিকেতনের অধিকর্তা সবুজকলি সেন, উপাধ্যক্ষ অশোক গুন, বিভাগীয় প্রধান সমীরণ মণ্ডলের পরামর্শে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। রৌপ্য পদক প্রাপ্তি থেকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। আর বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ থান্দার এবং সেন্টু মিত্র অনুশীলন থেকে প্রতিযোগিতা মঞ্চে পা রাখা পর্যন্ত সমানে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। পদক পেলে সকলের পরিশ্রম সার্থক হবে।
জাতীয় স্তরের উশু প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদকের পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সত্য নারায়ণ সিংহকে। জাতীয়স্তরের রৌপ্য পদক পাওয়ার, তিন তিনটি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতার— ন্যাশনাল চাম্পিয়নশিপ, ফেডারেশন কাপ চাম্পিয়নশিপ এবং অল ইন্ডিয়া ইন্টার ইউনিভার্সিটি চাম্পিয়নশিপ-এর স্বর্ণ এবং রৌপ্য প্রাপকদের হারিয়ে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জায়গা করে নিয়েছেন।
পুরুষ বিভাগে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ওই প্রতিযোগিতায় নামা ছাত্রের এমন সফলতায় খুশি শারীরশিক্ষা বিভাগ ও বিশ্বভারতী স্পোর্টস বোর্ড।
বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সমীরণ মণ্ডল এবং অধ্যাপক তথা স্পোর্টস বোর্ডের সম্পাদক সুদর্শন বিশ্বাস বলেন, “বিশ্বভারতীর জন্য খুবই আনন্দের এবং গর্বের বিষয়। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সত্য যাতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সফল হয়, সেই কামনা আমরা করছি।”