ত্রাতা: স্কুল-লাগোয়া পুকুর থেকে ছাত্রকে তুলছেন শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র
কোথাও স্কুলের সামনে ব্যস্ত সড়ক, কোথাও পাশে পুকুর। কিন্তু স্কুলে নেই কোনও পাঁচিল। তাই দিনের পর দিন বিপদের আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষকরা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে অনেক স্কুলে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে এক বা একাধিক ক্লাসঘর। যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে জেনেও জায়গার অভাবে সে সব ঘরেই পড়াশোনা করানো হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।
বিপজ্জনক ওই সব স্কুলের কথা সংবাদমাধ্যমে দেখে সম্প্রতি তৎপর হয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে ‘বিপজ্জনক’ স্কুলের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যেই ওই তালিকা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমানা পাঁচিল না থাকা ১৬১টি স্কুলের নাম ওই তালিকায় রয়েছে। সংস্কার না হওয়া এবং বেহাল আসবাবপত্র থাকা ৯৯৮টি স্কুলের নামও রয়েছে তাতে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিভিন্ন স্কুেল অতিরিক্ত ক্লাসঘর তৈরির জন্য পাঠানো হয়েছে ২৯টি স্কুলের নাম। তা দেখার পর রাজ্য সরকার সম্ভাব্য খরচ-সহ আবেদনপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। এখন তা তৈরির কাজ চলছে।
প্রশাসনিক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সম্প্রতি জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতর থেকে পাঠানো এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে— পুকুর, নদী, রেললাইন, জাতীয় বা রাজ্য সড়কের পাশে কোনও স্কুলে পাঁচিল না থাকলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুল পরিদর্শকের দফতরে আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। স্কুল সংস্কারের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ছবিও।
ওই নির্দেশিকা হাতে পায়ে স্বস্তি পেয়েছেন অনেক স্কুলের পরিচালন বোর্ডই। তার মধ্যে রয়েছে ময়ূরেশ্বরের কুলিয়ারা হেমশশী প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৯৭। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৪ জন। কিন্তু ক্লাস করাতে পারেন ৩ জন। এক জনকে পালা করে পড়ুয়াদের পাহারা দিতে হয়। কারণ পাঁচিল-বিহীন ওই স্কুলে সামনেই রয়েছে পুকুর। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ দাস জানান, অনেক সময় পুকুরে পা ধুতে গিয়ে অনেক পড়ুয়াই পিছলে জলে পড়েছে। তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।
রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, স্কুলের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা শিক্ষা দফতরকে একাধিক বার জানানো হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘নতুন নির্দেশিকায় স্কুলের চারপাশে পাঁচিল তৈরির ব্যবস্থা করা হলে বিপদের আশঙ্কা মিটবে।’’
একই অবস্থা লাভপুরের কেমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ওই স্কুলের তিন দিকে তিনটি পুকুর। অন্য দিকে গ্রামে যাতায়াতের ঢালাই রাস্তা। স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সেই রাস্তায় সব সময় চলে ট্র্যাক্টর, মোটরসাইকেল, ভ্যানো। তাই সেই স্কুলেও পড়াশোনার হাল একই রকম। সব সময়ই এক জন শিক্ষক থাকেন ‘পাহারাদারের’ ভূমিকায়। সেখানে পড়ুয়া ৩৪ জন। শিক্ষক মাত্র ২। এক জনই পালা করে নেন সব ক্লাস। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘‘এ বার পাঁচিলটা হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো।’’
এ বিষয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় জানান, রাজ্যের কাছে বিভিন্ন স্কুলের তালিকা-সহ প্রয়োজনীয় টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারের তরফে ওই টাকা মঞ্জুর করা হলে জেলার বিভিন্ন স্কুলের সমস্যা মিটবে।