জলমগ্ন সিউড়ি হাসপাতাল, দুর্ভোগে রোগী

অবৈধ দখলদারির জেরে বন্ধ নিকাশি নালা। পরিণামে জলমগ্ন হয়ে ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিষেবা। রবিবার থেকে এমনই চিত্র ধরা পড়েছে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। শুধু হাসপাতালের মূল পথই নয়, রবিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল সংক্রমণ বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগও। জল উঠে এসেছিল জরুরি বিভাগের দোরগোড়া পর্যন্ত। হাসপাতাল চত্বর এ ভাবে জলমগ্ন থাকায় বিপাকে রোগী থেকে চিকিৎসক সকলেই। সোমবার অবশ্য ওয়ার্ড থেকে জল সরেছে। তবে বৃষ্টি হলে একই ভয় থাকছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০১:১২
Share:

এমনই হাল হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের। —নিজস্ব চিত্র

অবৈধ দখলদারির জেরে বন্ধ নিকাশি নালা। পরিণামে জলমগ্ন হয়ে ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিষেবা।
রবিবার থেকে এমনই চিত্র ধরা পড়েছে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। শুধু হাসপাতালের মূল পথই নয়, রবিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল সংক্রমণ বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগও। জল উঠে এসেছিল জরুরি বিভাগের দোরগোড়া পর্যন্ত। হাসপাতাল চত্বর এ ভাবে জলমগ্ন থাকায় বিপাকে রোগী থেকে চিকিৎসক সকলেই। সোমবার অবশ্য ওয়ার্ড থেকে জল সরেছে। তবে বৃষ্টি হলে একই ভয় থাকছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সিউড়ি হাসপাতালের মূল গেটের দু’পাশের সীমানা প্রাচীর বরাবর প্রচুর অস্থায়ী ছোট বড় দোকান বসেছে। ফলে নিকাশি নালাটাই কার্যত বন্ধ। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে নিকাশি নালায় জমেছে মাটি, প্লাস্টিকের প্যাকেট, অন্য আবর্জনাও। একই ভাবে অবৈধ দখলদারির জেরে হাসপাতালের ডানদিকে যে দিকে মর্গ রয়েছে, তার ঠিক পিছনের প্রাচীর বরাবর থাকা নিকাশি নালাটিও (এই অংশটি তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে) বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে হাসপাতাল থেকে জল নির্গমনের দু’টি নিকাশি নালা বন্ধ থাকায় যে পরিণতি হওয়ার, তা-ই হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে একই ঘটনা ঘটছে জেলা হাসপাতালে। বৃষ্টি হলেই জল জমছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং অতিরিক্ত বর্ষণে রবিবার থেকে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে ঢোকার মূল পথ দিয়ে হাসপাতালে এলে বা ডান পাশে থাকা হাসপাতালের সুপারের কার্যালয়, রোগী সহায়তা কেন্দ্র, থ্যালাসেমিয়া ইউনিট, ডিজিটাল এক্স-রে ইউনিট বা সামনে জরুরি বিভাগ— সব জায়গাতেই যেতে হলে নোংরা জল ভেঙে ঢোকা ছাড়া কোনও গতি নেই। আর তাতেই বিরক্ত রোগীর আত্মীয়েরা। মহম্মদবাজার থেকে আসা শেখ মহিউদ্দিন, সাঁইথিয়ার চৈতালি পাল, রাজনগরের বিপ্লব ঘোষ বা সিউড়ি ১ ব্লকের সুখদি সরেনরা বলছেন, ‘‘এমন কেন হবে হাসপাতালের চেহারা? এর থেকে বর্ষায় মাঠের অবস্থাও অনেক ভাল হয়। সেখানে অন্তত নর্দমার নোংরা জল ভাঙতে হয় না। এতে তো রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে!’’

Advertisement

অবস্থা যে শোচনীয়, তা স্বীকারও করে নিয়েছেন সিউড়ি হাসপাতাল সুপার শোভন দে। তিনি বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা সঠিক ভাবে কাজ না করায় জন্যই জল জমছে। জল জমলে পরিস্থিতি অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। নোংরা জলে পা ঢুবিয়ে চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের যাতায়াত করতে চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এটা নিয়ে দ্বিমত নেই। ওয়ার্ডে জল ঢুকলে সমস্যা আরও বাড়ছে।’’ কিন্তু, এর কি কোনওই সমাধান নেই? শোভনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি কী করব? পরিস্থিতি বদলাতে প্রশাসনের সব স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। সিএমওএইচ-ও জানেন সমস্যার কথা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা যদিও দাবি করছেন, এই সমস্যার জন্য দায়ী মূলত পুরসভা এবং কিছুটা তিলপাড়া পঞ্চায়েত। তাঁর কথায়, ‘‘অবৈধ দখলদারির জন্য নিকাশি নালাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে জল তো জমবেই। প্রয়োজন অবৈধ দখল হঠিয়ে দেওয়া। তার জন্য প্রশাসনের সাহায্যের পাশাপাশি চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কিন্তু, এ ব্যাপারে কেউ-ই এগিয়ে আসছেন না।’’

আবর্জনায় রুদ্ধ নিকাশি নালা।

Advertisement

সমস্যার কথা মানছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আরিও। তিনি বলছেন, ‘‘আমি সব শুনেছি। সত্যি-ই খুব খারাপ পরিস্থিতি। সমাধানের তন্য আপাতত সুপারকে নির্দেশ দিয়েছি, পাম্প করে জল হাসপাতাল চত্বর থেকে বের করে দিতে। এখন আমি স্বাস্থ্যভবনে এসেছি। আজ, মঙ্গলবার গিয়ে জেলাশাসক, সভাধিপতি এবং পুরসভার সঙ্গে বসে একটা সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করব।’’ এ দিকে, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বর থেকে জল বের করে দেওয়ার জন্য সিউড়ি পুরসভাকে বলা হয়েছে।

অন্য দিকে, যাঁদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার মূল অভিযোগ, সেই সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ও মেনে নিচ্ছেন দখলদারির জন্য সমস্যা হয়েছে। তবে, উজ্জ্বলবাবুর আশ্বাস মঙ্গলবারই নিকাশি নালা পরিষ্কারের জন্য পুরসভা যথাযথ উদ্যোগ নেবে। প্রয়োজনে অবৈধ দখলদারি হঠাতে প্রশাসনেরও সাহায্য নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন