বিমায় নাম অন্তর্ভুক্তিতে শুরু প্রচার
Paddy production in West Bengal

বৃষ্টি কম, আমনে আশঙ্কার মেঘ

জেলায় আমন চাষ বরাবর বৃষ্টিনির্ভর। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ষাট শতাংশের বেশি।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৮
Share:

জোরকদমে চলছে ধান লাগানোর কাজ । বিষ্ণুপুরের খড়িকাশুলি। —নিজস্ব চিত্র।

গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বৃষ্টির ঘাটতিতে সত্তর শতাংশের মতো জমিতে আমনের চাষ করা গিয়েছিল জেলায়। এ বারেও শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টির ঘাটতিতে আশঙ্কার মেঘ দেখছে কৃষি দফতর। আগামী কয়েক দিনে ভারী বৃষ্টি না হলে চাষে ক্ষতির ভয় করছেন চাষিরাও। পরিস্থিতি বুঝে শস্যবিমা যোজনায় চাষিদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার শুরু করেছে দফতর।

Advertisement

জেলায় আমন চাষ বরাবর বৃষ্টিনির্ভর। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ষাট শতাংশের বেশি। বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রায় সর্বত্র বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলার কাজ সারা গিয়েছে। তবে বাধ সেধেছে ধান রোয়ার কাজ। চাষিদের বড় অংশ জানান, বৃষ্টির অভাবে জমিও তৈরি করা যায়নি। জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা সুশান্ত দত্ত বলেন, “এ বারে পুরুলিয়ায় ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হয়নি, এটাই আশার কথা। তবে খুব নগণ্য জমিতে ধান রোয়া গিয়েছে।”

বীজতলা বাঁচলেও তার বয়স বেড়ে যাওয়া চিন্তা বাড়াচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, মোটামুটি জুনের শেষে বীজতলা তৈরি হয়। তার ২১-৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপণ করাই নিয়ম। তবে প্রায় মাস পেরোতে চললেও ধান রোয়া যায়নি। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বাবুগ্রামের চাষি অজন্ত সিংদেও বারো বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত ফলন মিলবে বলে মনে হচ্ছে না। গত বছরে বৃষ্টির জন্য চাষ মার খেয়েছিল। এ বারেও অবস্থা সে দিকে যাচ্ছে।” বাঘমুণ্ডির চাষি দেবীপ্রসাদ কুইরি জানান, চড়া দামে কেরোসিন কিনে পাম্পের সাহায্যে হালকা সেচ দিয়ে কোনও ভাবে বীজতলা বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাঁর কথায়, “সংকর প্রজাতির ধানের চাষ করি। ওই প্রজাতির বীজতলা তাড়াতাড়ি বাড়ে। এখনই চারা রোপণ করতে না পারলে ফলন কার্যত কিছু হবে না।”

Advertisement

কয়েক দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি শুরু হলেও আবার অন্য সমস্যা হবে, দাবি চাষিদের একাংশের। তাঁরা জানান, টানা বৃষ্টি শুরু হলে সব চাষিই চাষের কাজে নামবেন। তখন ধান রোয়ার পর্যাপ্ত শ্রমিক মিলবে না। বৃষ্টি হলেও পুরো জমিতে চাষ করা যাবে না। চাষিদের আশঙ্কার সঙ্গে সহমত কৃষি দফতরও। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর সর্দার বলেন, “চারা রোপণের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ শতাংশ জমিতে চাষ হয়ে যাওয়ার কথা। এখন ভারী বৃষ্টি শুরু হলে কৃষি শ্রমিকের অভাব তৈরি হবে। চাষিরা পুরো জমিতে চাষ করে উঠতে সমস্যায় পড়বেন।”

এই অবস্থায় বাংলার শস্যবিমা যোজনায় চাষিদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার শুরু করেছে দফতর। সূত্রের খবর, বীজতলা নষ্ট হলে শতক প্রতি সত্তর টাকা ক্ষতিপূরণ মিলবে। নিতুড়িয়ার সহকারী কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মণ বলেন, “আমন চাষের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। বিমা যোজনার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। চাষিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।” যদিও অগস্টের শেষ পর্যন্ত চারা রোপণের সময় আছে, আশাবাদী কৃষিকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন