West Bengal Lockdown

চড়ছে দাম, দুশ্চিন্তা মধ্যবিত্তের 

দাম কে বাড়াচ্ছে, তা নিয়ে খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা একে-অন্যকে দুষছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৬
Share:

ছবি পিটিআই।

তিন সপ্তাহ ছুঁতে চলেছে ‘লকডাউন’। পুরুলিয়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন বাজারে একটু ভাল চালের দাম গত দু’ সপ্তাহে বেড়েছে কেজি প্রতি পাঁচ-ছয় টাকা। মুসুর বা অড়হর ডালের দাম ‘লকডাউন’-এর আগে যেখানে বিক্রি হত ৯০-৯৫ টাকা প্রতি কেজিতে, সেটাই এখন বিক্রি হচ্ছে, ১১৫-১২০ টাকা দরে। একই অবস্থা ভোজ্য তেল, আটার দামেও। যদিও এই পরিস্থিতিকে কালোবাজারি বলে মানতে নারাজ জেলা প্রশাসন।

Advertisement

পুরুলিয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার দাবি করেন, ‘‘টানা তিন সপ্তাহের লকডাউন চলছে। সে কারণে বাজারে কিছু জিনিসের জোগান কম, কিন্তু চাহিদা কমেনি। জোগান ও চাহিদার সামঞ্জস্য না থাকাতেই দাম কিছুটা বেড়েছে। অস্বাভাবিক মূল্য-বৃদ্ধি যাতে না হয়, সে জন্য পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’

আড়শার বাসিন্দা দেবীলাল মাহাতো, ঝালদার বাসিন্দা তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরের বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘লকডাউন শুরুর দিকে দাম মোটের উপরে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু এখন অনেকটাই বেড়েছে। দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, জোগান কম, তাই দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষের আয় তো বাড়ছে না। এত দাম বাড়লে লোকে কিনবে কী করে?’’

Advertisement

দাম কে বাড়াচ্ছে, তা নিয়ে খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা একে-অন্যকে দুষছেন। জেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরো বিক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাল, ডাল, আটা, চিনির বস্তা কিনে বিক্রি করেন। সেই খুচরো বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বিক্রেতারাই দাম বেশি নিচ্ছেন। সে হিসাবে তাঁরাও কিছুটা বেশি দামেই চাল, ডাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আদ্রা, রঘুনাথপুরের মতো জায়গার পাইকারি বিক্রেতাদের একাংশের আবার দাবি, দাম বাড়ার অন্যতম কারণ পণ্য পরিবহণে খরচ বাড়া ও গাড়ি থেকে পণ্য নামানোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদের বেশি মজুরি চাওয়া।

তাঁদের মতে, পুরুলিয়া জেলায় চাল, ডাল, আটা, তেল সবটাই আসে ভিন্‌ জেলা বা ভিন্‌ রাজ্য থেকে। লকডাউনে পণ্যবাহী গাড়ি চলছে খুবই কম। ফলে, সেই সব গাড়ি আগের থেকে কয়েক হাজার টাকা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। এর ফলে, ধাপ- ধাপে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

পুরুলিয়া জেলার একটি পরিবহণ সংগঠনের কর্মকর্তাদের দাবি, ভিন্‌ রাজ্য থেকে গাড়ি আসতে চাইছে না। কারণ রাস্তায় ধাবা, দোকান বন্ধ। তাই চালক, খালাসিরা গাড়ি চালাতে চাইছেন না। অন্য দিকে, গাড়ি থেকে পণ্য তোলা বা নামানোর জন্য শ্রমিকদেরও পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন করে শ্রমিক কাজে আসছেন। বস্তা পিছু আগে যে মজুরি নিতেন, এখন তার দ্বিগুণ চাইছেন।

পুরুলিয়া শহরের পাইকারি বিক্রেতাদের একাংশের কথায়, ‘‘লকডাউনে বাইরে বেরোলেই পুলিশ ধরছে। ফলে, কাজে আসতেই চাইছেন না শ্রমিকেরা। তাই বেশি মজুরি দিয়েই তাঁদের কাজে আনতে হচ্ছে।”

যদিও বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসন একটু কড়া হাতে মোকাবিলা করলেই, বেশি দাম নেওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। জেলা প্রশাসনের দাবি, জেলার সমস্ত বড় বাজারে নিয়মিত নজরদারি চালানোর কারণেই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি। একই দাবি করছে জেলা দুর্নীতি দমন শাখাও।

তবে সূত্রের খবর, জেলা দুর্নীতি দমন শাখা ও পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়মিত গিয়ে খুচরো বিক্রেতাদের উপরে নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাতেই ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে ঘুরে চড়ে যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন