নির্দেশ: বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র
ব্লকে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে পঞ্চায়েত কর্মীদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জেলাশাসক। মূলত একশো দিনের কাজ এবং নির্মল বাংলা প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে বৈঠকে বসেছিলেন পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১ টায়। জেলাশাসক ঢুকে দেখেন, ৮ জন পঞ্চায়েত প্রধানের মধ্যে এসেছেন মোটে তিন জন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা এত দূর থেকে বান্দোয়ানে এলাম ঠিক সময়ে। আর এলাকার লোকজনই সময় মতো আসতে পারলেন না!’’ বাকি পাঁচ জন প্রধান অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ পরে একে একে এসেছেন। আর হলঘরে ঢোকার সময়ে জেলাশাসকের প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন দফতরের কর্মী, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধারা, বিডিও, ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা এবং মহকুমাশাসক (মানবাজার) উপস্থিত ছিলেন। শুরুতেই প্রতিটি অঞ্চল ধরে ধরে একশো দিনের কাজের হাল জানতে চান জেলাশাসক। ধাদকা অঞ্চলের পঞ্চায়েত কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘আগেও জেলা সদরের বৈঠকে কাজের গতি নিয়ে আপনাদের সতর্ক করা হয়েছিল। শো-কজ পর্যন্ত করা হয়েছিল। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি। ওখান থেকে ফিরে আপনারা এলাকার কাজে জোর দেবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু এসে দেখছি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’
বৈঠকে বান্দোয়ান পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশান্ত রুহিদাস জানান, অঞ্চলে ১৮০০ জব কার্ড রয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ করেছেন ৮৩৮ জন। কুইলাপালের প্রধান সনকা সোরেন জানান, পঞ্চায়েতে ১৫৬৬ টি জব কার্ড থাকলেও কাজ পেয়েছেন মাত্র ৫৬৬ জন। জেলাশাসক তাঁদের কাছে জানতে চান, অন্যদের কি কাজের দরকার নেই? নির্দেশ দেওয়া হয়, যাঁরা ফর্ম পূরণ করবেন তাঁদের সবাইকে কাজ দিতে হবে। দরকার হলে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদেরই শ্রম দিবসের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। সমস্ত পরিবারের শিশুরা অপুষ্টির শীর্ষে রয়েছে তাদের কাজের দিন বাড়াতেও বলা হয়েছে। তবে একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধান এবং কর্মীরা তাঁদের এলাকায় এ রকমের কতগুলি পরিবার রয়েছে তা বলতে পারেননি। তাঁদের ব্লকের সিডিপিও-র থেকে তথ্য নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় নির্মল বাংলা প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮-র ১৫ অগস্টের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে নির্মল ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। কাজের এ রকমের হাল বরদাস্ত করা হবে না।’’ প্রতিটি পঞ্চায়েতকে প্রতিদিন কতগুলি করে শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে তার হিসেব ঠিক করে দেন তিনি।
বৈঠকে জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওপর থেকে আমাদের বলা হচ্ছে। আমরা বিডিও-দের বলছি। কিন্তু মাঠে নেমে যাঁরা কাজটা করবেন তাঁরা যদি নিজেদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধ না হন, তাহলে কিছুই হওয়ার নয়।’’ বিডিও (বান্দোয়ান) মহাদ্যুতি অধিকারিকে তাঁর এলাকার পঞ্চায়েতগুলির প্রতিদিনের কাজের খতিয়ান নিয়ে রাখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।