১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে জবকার্ডধারীরাই পরিচ্ছন্ন করবেন শিক্ষাঙ্গন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। দেখাশোনা করবেন গাছপালার। এই মর্মে কিছু দিন আগেই রাজ্য শিক্ষা ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশিকা পৌঁছেছে জেলায়। তার ভিত্তিতে জবকার্ডধারীদের বেছে কাজ দিচ্ছে পঞ্চায়েত। কিন্তু, সেই কাজ পাওয়ার মানদণ্ড কী? সেই প্রশ্নেই প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে জবকার্ডধারীদের মধ্যে। কেননা নির্দেশিকায় সে নিয়ে স্পষ্ট করে কোনও কথাই বলা হয়নি।
কাজ দেওয়া নিয়ে জেলার নানা প্রান্তে আবার পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগও উঠেছে। দিন কয়েক আগে সিউড়ির খটাঙ্গা পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে স্বনির্ভর দলের কয়েক’শো মহিলা সদস্য সিউড়ি ১ বিডিও-র কাছে হাজির হয়েছিলেন। ওই ব্লকের ভুরকুনায় মহিলাদের হাতে হেনস্থা হন উপপ্রধান। বড়তুড়ি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ময়ূরেশ্বরের স্কুলে তালা ঝুলিয়েছিলেন গ্রামবাসীর একাংশ।
প্রশাসনেরই একটি সূত্রের দাবি, যত গোলমাল ওই নির্দেশিকাতেই। নাম গোপন রাখার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাজ্য থেকে আসা নির্দেশিকায় জবকার্ডধারী হলেই কাজ পাবেন এমনটা বলা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে শুধু মহিলারই ওই কাজ করতে পারবেন। তাতেও যে সংশয় কাটানো যায়নি একের পর এক পঞ্চায়েতে ক্ষোভেই তা স্পষ্ট।
নির্দেশিকায় ঠিক কী বলা আছে? বিভ্রান্তিই বা কোথায়?
জেলা প্রশাসন ও এনআরইজিএ সেল সূত্রের খবর, সবস্তরের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং গাছপালা রক্ষণাবেক্ষণ করতে জবকার্ডধারীদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ছাড়াও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিকশিক্ষা গুলিতে দু’জন করে জবকার্ডধারী ১০০ দিন করে দায়িত্ব পালন করবেন। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দায়িত্ব পাবেন এক জন করে জবকার্ডধারী। কাজের মেয়াদ শেষ হলে অন্য জবকার্ডধারীকে সুযোগ দেওয়া হবে। কাকে কাজ দেওয়া হবে সেটা বাছাই করবে স্থানীয় পঞ্চায়েত।
একটি পঞ্চায়েতে গ়ড়ে দশটি প্রাথমিক স্কুল, সম পরিমাণ শিশুশিক্ষাকেন্দ্র এবং গোটা দু’য়েক উচ্চমাধ্যমিক স্কুল কিংবা এমএসকে থাকে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা গড়ে ২০-২৫টি। জবকার্ডধারী বাছাই হলে বড়জোড় ১০০ জন মহিলাকে কাজে লাগনো যায়। কিন্তু একটি পঞ্চায়েতে তো কয়েক হাজার মহিলা জবকার্ডধারী রয়েছেন। ফলে সকলকে কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেখানেই। কেউ কাজ পেলে কোন যুক্তিতে পেলেন, কেউ না পেলে কেনই বা পেলেন না সেই ব্যাখ্যাও অনেক সময় দিতে পারছে না পঞ্চায়েতগুলি। তখন চড়ছে ক্ষোভের পারদ। যেমন—সিউড়ি ১ ব্লকে ঝামেলার মূলে রয়েছে সেখানকার কিছু স্বনির্ভর দলের মহিলাকে স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে কাজে লাগানোয়। সিউড়ি ১ এর বিডিও মহম্মদ বদরুদ্দোজা বলছেন, ‘‘সকলকে তো কাজে লাগানো যাবে না। বাকিদের সেটা বুঝিয়েছি।’’
তা হলে উপায়?
প্রশাসনের একটি সূত্রের পরামর্শ, প্রান্তিক মহিলা, বিধবা বা প্রতিবন্ধী মহিলাদের কাজ দেওয়া হোক। কোনও পঞ্চায়েতে তেমনটা না পাওয়া গেলে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে সর্বদল বৈঠক করে কাকে নেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। তার সঙ্গে জোরদার প্রচার আর সদিচ্ছা জরুরি বলেও মনে করেছেন এঁদের অনেকে।