নোট বাতিলের জের, ভিড় কম মদের দোকানেও

উত্তরের হাওয়ায় শীতের ছোবল। কিন্তু সে ছোবলে বুক যতোই কেঁপে উঠুক, পানশালা মুখো হওয়া এখন বেশ কঠিন। খুচরোর আকালে বাংলা মদেও মন নেই নেশাড়ুদের! এক দিকে নোট বাতিলের ধাক্কা, অন্যদিকে দর বেশ কিছুটা বেড়ে যাওয়া— এই জোড়া ধাক্কায় এ বার নেশা চম্পট হওয়ার যোগাড়। অন্যদিকে মদ ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা ছিলই।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

উত্তরের হাওয়ায় শীতের ছোবল। কিন্তু সে ছোবলে বুক যতোই কেঁপে উঠুক, পানশালা মুখো হওয়া এখন বেশ কঠিন। খুচরোর আকালে বাংলা মদেও মন নেই নেশাড়ুদের!

Advertisement

এক দিকে নোট বাতিলের ধাক্কা, অন্যদিকে দর বেশ কিছুটা বেড়ে যাওয়া— এই জোড়া ধাক্কায় এ বার নেশা চম্পট হওয়ার যোগাড়। অন্যদিকে মদ ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা ছিলই। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। মাথায় হাত পড়েছে জেলার মদ ব্যবসায়ীদের। নোট বাতিলের ধাক্কায় বিক্রি কমেছে মদ উৎপাদন সংস্থা থেকে খুচরো বিক্রেতাদেরও। তবে শুধু যে টাকা বাতিলের জন্যই বিক্রি কমেছে তা নয়। অধিকাংশ মদ বিক্রেতাদের দাবি, মদ বিক্রি কমার বড় কারণ এ বার মদের দাম বৃদ্ধি। যে দিন সরকার দেশি ও বিদেশি মদের দাম বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে, সেই দিনই অর্থাৎ আট নভেম্বর রাত্রে টাকা বাতিলের কথাও ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বীরভূমে সরকার অনুমোদিত একমাত্র মদ উৎপাদন সংস্থাটি সাঁইথিয়ার আমোদপুরে রয়েছে। টাকা বাতিলের জেরে সেখানে উৎপাদন হ্রাস না পেলেও বিক্রি কমেছে বলে জানা গেছে!

জেলা আবগারি দফতর ও মদ বিক্রেতা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মদ বিক্রি দোকানের সংখ্যা ৩১২টি। তার মধ্যে ২৮৪টা চালু আছে। বিক্রেতাদের দাবি, শীত পড়তেই মদের চাহিদা বাড়তে থাকে প্রতিবার। কিন্তু হঠাৎ করে টাকা বাতিল ও এক ধাক্কায় মদের দাম অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ায় গড়ে ২৫-৩০ শতাংশ মদ বিক্রি কমে গিয়েছে।

Advertisement

সিউড়ির এক মদ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মদের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে তাতে খরিদ্দার কমবে তা জানাই ছিল। গোদের উপর বিষফোড়া হল টাকা বাতিল।’’

একই কথা বলছেন সাঁইথিয়ার এক মদ ব্যবসায়ীও। বলেন, ‘‘উৎপাদন সংস্থায় এক বোতল মদের দাম ছিল ৫৫ টাকা। গত আট তারিখ থেকে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। কাজেই বিক্রি যে একটু কমবে তা আমাদের জানাই ছিল। কিন্তু টাকা বাতিল হওয়ায় আমরা বাতিল নোট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। খরিদ্দারদের অনেকেই বাতিল ৫০০ বা হাজার টাকার নোট নিয়ে আসছেন। এত খুচরো কোথায় পাব! ফলে তাঁদেরকে মদ বিক্রি করা যাচ্ছে না।’’ বোলপুরের এক মদের দোকানের মালিক বলেন, ‘‘যেখানে দৈনিক প্রায় ৬০ হাজার টাকার ব্যবসা হতো, সেখানে এখন মেরে কেটে ৩০ হাজার টাকার ব্যবসাও হচ্ছে না।’’

‌ব্যবসায়ীদের দাবি, মদের দাম সম্প্রতি ১৬-২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। একে মানুষের হাতে নগদ টাকা নেই, তার উপর আবার দর বেড়ে যাওয়া। ব্যবসা এক ধাক্কায় এতটা কমে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে প্রায় সকলেরই। কেউ কেউ অন্য সমস্যার কথাও বলছেন। ‘‘পুজো মরসুমে চুটিয়ে ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু তার রেশ কাটতে না কাটতেই এতবড় ধাক্কা খাব ভাবিনি। দোকানের কর্মীদের বেতন দেওয়ার টাকাও এখন উঠছে না।’’

দুবরাজপুর, নানুর, বাসাপাড়া, লাভপুর, নলহাটি— জেলার নানা প্রান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দোকানে ভিড় কমেছে। শীতের প্রথমে উৎসব অনুষ্ঠানে মদ কেনার হিড়িকও বেশ কম। দেশি মদের দাম দশ টাকা বাড়লেও মদ বিক্রেতার দাবি, বিদেশি মদের দাম ১৫-২০০, এমনকি ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাজেই বিক্রি কমবেই।

সাঁইথিয়ার বিদেশি মদের দোকানের মালিক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমনিতেই দেশি মদ অপেক্ষা বিদেশি মদের দাম অনেক বেশি। বড় নোট বাতিলের কারণে আমরা তা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে অনেক ক্রেতা দু’হাজার টাকার নোট দিয়ে বিদেশী মদ চাইলেও আমরা মদ দিতে পারছি না। কারণ মদের দাম বাদ দিয়ে বাকি টাকা ফেরৎ দেওয়া সমস্যা।’’ তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, ‘‘কেউ দুশো টাকা দামের মদ নিয়ে দু’হাজার টাকার নোট দিলেন, ছোটো নোটের অভাবে তাঁকে আঠেরো শো টাকা ফেরৎ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’

আবগারি দফতর সূত্রে খবর, আমোদপুরের উৎপাদিত মদ বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি জেলায় বিক্রি করা হয়। গত বছর নভেম্বর মাসে ১৫.৫০ লক্ষ বোতল মদ বিক্রি হয়েছে বীরভূমে। অন্যান্য জেলাতেও কম বেশি প্রায় একই রকম বিক্রি হয়েছে। এ বারে নোট বাতিলের পর থেকে সেই বিক্রিতে ভাটা যে পড়েছে, তার হিসেব আন্দাজ করা যাচ্ছে এখনই। তবে সংস্থা সূত্রের খবর, মদের দাম বাড়বে বলে অনেক রিটেলার আগে থেকেই বাড়তি মদ তুলে নিয়েছিলেন। ফলে গড় বিক্রি প্রায় সমান থাকার কথা। সরকার অনুমোদিত আমোদপুরে জেলার একমাত্র মদ উৎপাদন সংস্থার মালিক সরজিৎ দে বলেন, ‘‘যেহেতু দাম বাড়ার কথা চলছিলই, সেই জন্য জেলার অনেক বিক্রেতা মদ সংগ্রহ করে নিয়েছিল। তবে বিক্রি কমেছে!’’

জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেডেন্ট তপনকুমার রায় বলেন, ‘‘গত বছর রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১২৭ কোটি টাকার মতো। এ বারে আমাদের দেড়শো কোটির লক্ষ আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন