Purulia

শিক্ষক খুনের ঘটনায় ধৃত স্ত্রী ও ‘প্রেমিক’

শনিবার অজয়কে এবং রবিবার পাপড়িদেবীকে গ্রেফতার করা হয়। পুরুলিয়া আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তেরা এখন জেল হেফাজতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share:

গ্রেফতার হওয়ার পরে। পুরুলিয়া। নিজস্ব চিত্র

কলেজ শিক্ষক খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করল জেলা পুলিশ। পুলিশের দাবি, অরূপ চট্টরাজ নামে আংশিক সময়ের ওই কলেজ শিক্ষককে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী পাপড়ি বিশ্বাস চট্টরাজ এবং তাঁর ‘প্রেমিক’ মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা অজয় অম্বানি। শনিবার অজয়কে এবং রবিবার পাপড়িদেবীকে গ্রেফতার করা হয়। পুরুলিয়া আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তেরা এখন জেল হেফাজতে।

Advertisement

পুলিশের দাবি, বিয়ে করার জন্য পাপড়িদেবীকে চাপ দিচ্ছিল অজয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অরূপ। সে কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষা হয়েছিল।

গত ১৭ জানুয়ারি রাতে পুরুলিয়া শহরের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার চানাচুর গলির বাসিন্দা অরূপবাবুকে তাঁর ঘরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। অরূপবাবুর চিৎকার শুনে তাঁর ঘরে ছুটে যান তাঁর মা। গিয়ে দেখেন, ছেলেকে জাপটে ধরে রয়েছে এক ব্যক্তি। ঘরে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় তার চেহারা দেখতে পাননি অরূপবাবুর মা। আততায়ীর ধাক্কায় তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর তিনি নীচের ঘর থেকে আলো নিয়ে অরূপবাবুর ঘরে আসেন। দেখেন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর ছেলে। আততায়ী উধাও। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অরূপবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তদন্ত শুরু করে পুরুলিয়া (সদর) থানা।

Advertisement

নিহতের পরিবারের লোকজনের বয়ান এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা হয়, আততায়ী বাড়ির ছাদের সিঁড়িতে ঘাপটি মেরে বসেছিল। অরূপবাবু ঘরে ঢুকতেই তাঁর উপরে হামলা চালায় আততায়ী। পুলিশ সূত্রের খবর, অরূপবাবুর বাড়ির ছাদ থেকে একটি দড়ি উদ্ধার হয়েছিল। তদন্তকারীরা অনুমান করেন, খুন করার পরে আততায়ী ওই দড়ি বেয়ে ছাদ দিয়ে নেমে পালিয়েছিল। বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানায়, ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। তখনই পুলিশের সন্দেহ হয়, খুনের নেপথ্যে নিহতের ঘনিষ্ট কারও হাত রয়েছে।

রহস্যভেদ হল কী করে?

পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্তকারীরা জানতে পারেন, খুনের ঘটনা ঘটলেও পাপড়িদেবী দোতলার ঘরে যান অনেক পরে। তার আচরণেও ‘নিষ্পৃহ ভাব’ লক্ষ্য করেছিলেন পুলিশকর্মীরা। তখনই পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে পাপড়িদেবীর উপরে। তদন্তকারীদের দাবি, মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা যায়, ঘটনার দিন তিনি নিজের মোবাইল থেকে একটি নম্বরে একাধিক বার ফোন করেছিলেন। দ্বিতীয় নম্বরের সিমকার্ডটিও নেওয়া হয়েছিল পাপড়িদেবীর নামে।

পাপড়িদেবীর দ্বিতীয় সিমকার্ডটি খতিয়ে দেখে অজয়ের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। ‘টাওয়ার লোকেশন’ পরীক্ষা করে দেখা যায়, ঘটনার সময় অজয় পুরুলিয়া শহরে ছিল। অজয় রাঁচির একটি হোটেলে কাজ করত। শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুরুলিয়া নিয়ে আসে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এক টানা জেরায় ভেঙে পড়ে অজয় তাদের কাছে গোটা ঘটনার কথা খুলে বলে। এর পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন গ্রেফতার করা হয় পাপড়িদেবীকে।

জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের দাবিন, ২০ বছর আগে পাপড়িদেবী এবং অজয় পুরুলিয়ার একটি কলেজে এক সঙ্গে পড়াশোনা করতেন। তাঁদের মধ্যে তখন ‘ঘনিষ্ঠতা’ গড়ে ওঠে। তবে কলেজ জীবন শেষ হওয়ার পরে, সেই সম্পর্কে যবনিকা পড়ে। পরবর্তীকালে দু’জনেরই বিয়ে হয়। বছর আড়াই আগে ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হয়। ফের সম্পর্ক তৈরি হয় দু’জনের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন