জঙ্গলের পোড়ো বাড়িতে বধূর দেহ

শ্রীনিকেতন পেরিয়ে এসে আমার কুটির যাওয়ার পথে ক্যানেলের আগে বাঁ দিকে নেমে গেছে একটি সরু লাল মাটির রাস্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর ও নানুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

তদন্তকারী: এই বাড়িতেই মিলেছে দেহ। (বাঁ দিকে) ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। নিজস্ব চিত্র

শ্রীনিকেতন পেরিয়ে এসে আমার কুটির যাওয়ার পথে ক্যানেলের আগে বাঁ দিকে নেমে গেছে একটি সরু লাল মাটির রাস্তা। চিপকুঠির জঙ্গল নামে পরিচিত এই এলাকা। ওই রাস্তা শুরুর মুখেই ফলকে লেখা ‘বিনা অনুমতিতে এই এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ’। সেই এলাকা থেকেই শনিবার সকালে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হল। তখনও তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। দুপুরে জানা গেল, মৃত মহিলার নাম আলমিনা বেগম ওরফে বাণী (৩৫)। তাঁর বাড়ি নানুর থানার নিমড়া গ্রামে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদেহের মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, এটি খুনের ঘটনা। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ হয়নি। আলমিনার স্বামীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এ দিন ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘‘গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।’’

মহিলার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও এ দিন ময়নাতদন্ত হয়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দেহটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ, রবিবার ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা।

Advertisement

আলমিনার বাপের বাড়ি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বছর ১৯ আগে বাসিন্দা আলমিনার সঙ্গে বিয়ে হয় ওই গ্রামেরই এক পাথর-বালির ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁদের দু’টি ছেলেমেয়ে রয়েছে। পরবর্তী কালে ওই ব্যবসায়ী নিমড়ার আর এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁদেরও তিনটি মেয়ে রয়েছে। দুই স্ত্রী আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকতেন। আলমিনার বাবা আরমান শেখের দাবি, ‘‘মেয়ের উপরে দীর্ঘদিন ধরেই অত্যাচার করা হত। আমি ওকে আমার বাড়ি চলে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে আসতে পারে নি।’’ তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ তাঁর জামাই আলমিনাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবেন জানিয়ে গাড়ি ভাড়া করে বোলপুরে যান। তার পর থেকে দু’জনের খোঁজ মিলছিল না। শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ নিমড়ায় মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পৌঁছয়।

এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ শ্রীনিকেতনের লোহাগড় গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মিঞা অন্য দিনের মতোই তাঁর কাজের জায়গায় যাচ্ছিলেন। জঙ্গলের ভিতরেই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাছচাষের পুকুর ধারের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন তিনি যান। রাস্তা থেকে নেমে একটু জঙ্গলের দিকে এগোতেই বহুদিনের পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। ইসমাইল জানান, ওই বাড়ির দিকে তাকাতেই বাড়ির ভিতরে এক জোড়া জুতো দেখতে পান তিনি। সেখান থেকে একটু এগোতেই বাড়ির ভিতরে দু’টো পা দেখতে পান। তাঁর কথায়, ‘‘ওই অবস্থায় মুখ দেখার মতো সাহস আমার ছিল না! সেখান থেকে বেরিয়ে থানায় খবর দিই।’’ খবর পেয়ে লোহাগড়, মোলডাঙা থেকে অনেক গ্রামবাসী চলে আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ারেরা থাকেন। তার পরও নিষিদ্ধ জায়গায় মানুষ ঢুকল কী ভাবে?’’ এ দিন বিকেলে তদন্তের জন্য পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয়। মৃতদেহ পড়ে থাকা জায়গাটি-সহ আশপাশের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা ঘোরে কুকুরটি। এর পরে মূল রাস্তা থেকে ক্যানাল হয়ে সোনাঝুরির রাস্তার দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে যায়। তার পর সেখান থেকেই ঘুরে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের পাশে কীর্ণাহারের একটি গয়নার দোকানের নাম লেখা ব্যাগ মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন