নেশা করে বাড়ি ফিরে বধূকে ‘মারধর’ স্বামীর

প্রতিরোধেও ‘স্বনির্ভর’

গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই খেতেখামারে কাজ করেন। টেনেটুনে সংসার চলে। এলাকার মহিলারা সংসারের হাল ফেরাতে কয়েক বছর ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে নানারকম কাজে যুক্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোরো শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০২
Share:

কেন্দাজোড় গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নেশা করে এলাকার এক বধূকে তাঁর স্বামী মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই ক্ষোভে গ্রামের ১৯টি মদ ভাটিতে গিয়ে লাঠি-সোঁটা নিয়ে শাসিয়ে এলেন গ্রামের মহিলারা। শুধু কথাতেই থামেননি। চোলাই ভর্তি বেশ কয়েকটি হাঁড়ি তুলে তাঁরা আছাড়ও মারেন। বোরো থানার কেন্দাজোড় গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

ওই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই খেতেখামারে কাজ করেন। টেনেটুনে সংসার চলে। এলাকার মহিলারা সংসারের হাল ফেরাতে কয়েক বছর ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে নানারকম কাজে যুক্ত। তাতে যেমন দু’টো বাড়তি রোজগার বেড়েছে, তেমনই এলাকার মহিলারা একজোটও হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় ওই গ্রামের এক মহিলাকে তাঁর স্বামী নেশা করে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁর মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালে তিনি চিকিৎসাধীন। বধূটি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। তাঁকে মারধরের খবর ওই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার অন্য মহিলারা ক্ষীপ্ত হয়ে ওই বাড়িতে জড়ো হন। বাসিন্দারা জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী এলাকাছাড়া।

Advertisement

একটি স্বনির্ভর দলের সভানেত্রী স্নেহলতা মাহাতো, স্বনির্ভর দলের সদস্য ছায়া সাউ বলেন, ‘‘বুধবার রাতে যা ঘটেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। এলাকার অনেক পুরুষই নিয়মিত ভাটিগুলিতে গিয়ে নেশা করছে। তারপরে মাঝে মধ্যেই বাড়ির মেয়ে-বউদের গায়ে হাত দিচ্ছে। কিন্তু দিনের পর দিন এই অত্যাচার সহ্য করা যায় না।’’

এরপরেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সংসারে শান্তি ফেরাতে ভাটি বন্ধ করতে হবে। সে জন্য পুলিশের সঙ্গেও তাঁরা আগাম কথা বলে নেন। সাধারণত সন্ধ্যা বেলাতেই ভাটিগুলি জমজমাট হয়ে ওঠে। তাই বৃহস্পতিবার অন্ধকার নামার পরেই লাঠি বাগিয়ে তাঁরা একের পর এক ভাটিতে হানা দেন।

গোষ্ঠীগুলির সদস্যেরা জানান, গ্রামে যে ১৯টি ভাটি চলছে তাঁরা প্রথমে জানতেন না। কয়েকটি ভাটিতে ঘুরতেই তাঁরা টের পান, আশপাশে আরে কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে চুরিয়ে মদ বিক্রি চলছে। কয়েকটি জায়গায় তখন চোলাই তৈরি চলছিল। কিছু জায়গায় আবার বিক্রির আসর বসেছিল। ঘরের কোণে এতদিন অবলা দেখা মহিলাদের দাপট দেখে চুপসে যান নেশাড়ু ও ব্যবসায়ীরা। কেউ বাধা গিয়ে এগিয়ে যাননি বলেই এলাকা সূত্রে খবর। গোষ্ঠীর সদস্যেরা দাবি করেন, ভাটি থেকে চোলাইয়ের সমস্ত হাঁড়ি তুলে গ্রামের অদূরে নিয়ে গিয়ে একটি জায়গায় ফেলে দেন।

ফেরার পথে অর্চনা মাহাতো ও কল্পনা মাহাতোরা বলে আসেন, ‘‘এ বারকার মতো ছেড়ে দেওয়া হল। পরে বিক্রিবাটা করলে সরাসরি থানায় গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন