Purulia

জল-কষ্টের সুরাহা লক্ষ্য প্রমীলাদের

জল-কষ্টের সুরাহা লক্ষ্য বিসরি পঞ্চায়েতের প্রমীলাদের

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০১:৪৩
Share:

আলোচনায় তৃণমূলের প্রমীলা বাহিনী। নিজস্ব চিত্র।

সংসার সামলেছেন এত দিন। এ বার দায়িত্ব আরও বেশি। আগামী পাঁচ বছর তাঁদের ৩৯টি গ্রামের ভাল-মন্দ দেখতে হবে। তাই শপথ না নেওয়া হলেও মানবাজার ১ ব্লকের বিসরি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের জয়ী আট মহিলা পঞ্চায়েত প্রার্থী আগামী দিনের কাজের অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত।

Advertisement

বিসরি পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের জয়ী আট জনই মহিলা। সিপিএমেরও এক জন মহিলা সদস্য রয়েছেন। সিপিএমের বাকি দু’জন পুরুষ। বিজেপিরও দু’জন পুরুষ জিতেছেন। ফলে শাসক-বিরোধী মিলিয়ে এই পঞ্চায়েতে ন’জনই মহিলা। এই প্রমীলা বাহিনী আগামী দিনে এলাকায় কেমন কাজ করেন, সে দিকেই অনেকের নজর।

পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক নির্বাচনে জেলার আর কোনও পঞ্চায়েতে মহিলারাই বোর্ড গঠন করতে চলেছেন, এমন নজির নেই। মানবাজারের বিসরি পঞ্চায়েতের প্রমীলা বাহিনীকে প্রশাসনের তরফে শুভেচ্ছা জানাই। বোর্ড গঠনের পরে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁদের পঞ্চায়েত পরিচালনায় সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’

Advertisement

মহিলাদের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও পঞ্চায়েত পরিচালনায় তাঁরা কতটা স্বাধীনতা পান, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ, পরিকল্পনা তৈরি করা থেকে বাস্তবায়ন— সবেতেই পুরুষদের ছায়া থেকে যায়।

বিসরি পঞ্চায়েতে তেমনটা হবে না বলেই দাবি করেছেন তৃণমূলের মানবাজার ১ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ পাত্র। তিনি নিজেও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জয়ী হয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এই পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে সাতটি মহিলা সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু মহিলাদের অগ্রাধিকারের কথা বলেন, আমরা তাই সব ক’টি আসনেই মহিলাদের প্রার্থী করেছিলাম। তাঁদের কোনও কাজেই পুরুষরা হস্তক্ষেপ করবেন না।’’

বামফ্রন্ট আমলে বাঁকুড়া জেলার তালড্যাংরার ফুলমতি ও ইন্দাসের করিশুণ্ডা পঞ্চায়েত সম্পূর্ণ ভাবে মহিলারা পরিচালনা করেছিলেন। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি দাবি করেন, “প্রশাসনিক নিয়মনীতি মানা ও স্বচ্ছ ভাবে কাজকর্মের দিক দিয়ে মহিলা পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি এগিয়ে ছিল। প্রশাসনিক মহল বা দলীয় স্তর সব জায়গাতেই সাবলীল ভাবে নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতেন মহিলা প্রধানেরা। স্থানীয় মহিলাদের রাজনীতিতে উৎসাহিত করতেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁরা।’’

বেসরা পঞ্চায়েতের জয়ী তৃণমূল সদস্যেরাও নিজেরা আগামী দিনের কিছু কাজের পরিকল্পনার ছক কষে নিয়েছেন। বোর্ড গঠনের পরে যাতে সময় নষ্ট না হয়, সে জন্য তাঁরা নিয়মিত বৈঠকে বসছেন। তৃণমূলের জয়ী আট সদস্য হলেন আরতি মান্ডি, কল্যাণী হেমব্রম, সুন্দরা বাউরি, শিখা ধবলবাবু, রেণুকা মাহাতো, প্রতিমা বাউরি, কল্যাণী বাউরি ও সজ্জিতা বেসরা। শেষের দু’জন বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্যও। সজ্জিতা বিদায়ী পঞ্চায়েতে প্রধান। তাঁরা জানিয়েছেন, রেণুকা ও সজ্জিতা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। বাকিরা হাইস্কুলে ঢুকে বেশি দূর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

বস্তুত, বিদায়ী পঞ্চায়েতে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও দলীয় কোন্দলের জেরে এলাকা উন্নয়নের কাজ শিকেয় উঠেছিল বলে অভিযোগ। ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সজ্জিতা প্রধান হন। বছর ঘুরতেই তাঁকে সরিয়ে দলের আর এক সদস্য লতা সিংহ প্রধান হন। মেয়াদ ফুরানোর আগে ফের সজ্জিতা প্রধান হন। এই টানাপড়েনের প্রভাব পড়ে এলাকার উন্নয়নে।

সম্প্রতি সজ্জিতা এ বারের জয়ী সদস্যদের নিয়ে আলোচন করছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বারে নানা কারণে উন্নয়নের কাছ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল। এ বার বোর্ড গঠন হওয়ার পরেই আমরা এলাকার নানাবিধ উন্নয়ন বাস্তবায়িত করতে দ্রুত কাজ শুরু করতে চাই।’’

কী পরিকল্পনা নিয়েছেন?

পুরুলিয়ার গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সজ্জিতা বলেন, ‘‘জলের সঙ্কটের সমে সাধারণত মেয়েদেরই দূরদূরান্ত থেকে জল সংগ্রহ করে আনতে হয়। সে জন্য প্রথম ধাপে আপাতত আটটি সংসদ এলাকায় সৌরশক্তি চালিত পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। পতিত জমি ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে উর্বর করে আম, কাজুর মতো অর্থকরী ফলের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার স্বনির্ভর দলের মহিলারা কাজ পাবেন। স্বনির্ভর দলের মহিলাদের দিয়ে বাল্যবিবাহ রোধ, স্কুল ছুট ঠেকানো প্রভৃতি বিষয়ের সচেতনতা শিবির করে তাঁদের সামাজিক পরিবর্তনের কাজে লাগানোর ভাবনাও রয়েছে।’’

সিপিএমের জয়ী মহিলা সদস্য সাধনা মাহাতোও বলেন, ‘‘ডাক পেলে এলাকার উন্নয়নে আমিও ওঁদের পাশে রয়েছি। এখানে দল নয়, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল হওয়াই বড় কথা।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘এর আগে ওই পঞ্চায়েতে যতটা উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। আশা করছি এ বার ওই পঞ্চায়েতের প্রমীলা বাহিনী আগের ঘাটতি পুষিয়ে দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন