জরাজীর্ণ ছাদ চুঁইয়ে জল, ছাতা মাথায় অফিসে কাজ

জরাজীর্ণ ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির জল ঠেকানো যায়নি। তাই অফিসের ভিতরে ছাতা মাথায় কাজ করেন কর্মীরা। ফাইলপত্র চটপট মুড়ে ফেলতে হয় প্লাস্টিকে। এ ভাবেই কাজ চলছে পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০০
Share:

ভরসা: পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে। ছবি: সুজিত মাহাতো

অ্যাসটেরিস্ক কমিক্সের বিশালাকৃতিক্স যখন তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার ভয়ে কাতর হয়ে থাকত। ওরাও তেমনই ভয় পান। তবে আকাশ নয়, ছাদ ভাঙার ভয়ে আতঙ্কিত ওঁরা। অফিসের ভিতর তাই লোহার পাত দিয়ে মোড়া হয়েছে। তাতে চাঙড় ভেঙে পড়া থেকে স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু জরাজীর্ণ ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির জল ঠেকানো যায়নি। তাই অফিসের ভিতরে ছাতা মাথায় কাজ করেন কর্মীরা। ফাইলপত্র চটপট মুড়ে ফেলতে হয় প্লাস্টিকে। এ ভাবেই কাজ চলছে পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে।

Advertisement

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চাশের দশকে যখন থেকে জেলা সদরে এই দফতরের কাজকর্ম শুরু হয়, তখন থেকেই এই বাড়িতেই অফিস চলছে। মোট ছ’টি ঘরে শুরু হয়েছিল অফিসের কাজকর্ম। গ্রন্থাগার, দরকারি জিনিসপত্র এবং বইপত্র রাখার গুদাম-সহ মোট ছ’টি ঘরে অফিস চলত। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তিনটি ঘরে চাঙড় খসে পড়তে থাকায় ব্যবহার করা হয় না। ফলে কমতে কমতে এখন তিনটি ঘরে অফিসের কাজকর্ম চলে।’’

আরও পড়ুন: অনাহারে মৃত্যুতে ‘বদনাম’ গ্রামের, হামলা গ্রামবাসীদের

Advertisement

কিন্তু বাকি যে তিনটি ঘরে অফিস বসে, তার অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। এক কর্মী বলেন, ‘‘এই ঘরগুলিও কম বিপজ্জনক নয়! কিন্তু ওই ঘরগুলি বাতিল করলে কোথায় অফিসের কাজকর্ম চলবে? দু’টি ঘরের উপর থেকে ঝুর ঝুর করে সিমেন্ট-বালি ঝকে। যে কোনও সময়েই চাঙড় খসে পড়তে পারে। তাই একটি ঘরে জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। অন্য ঘরটিতে কাজ হয় বটে, তবে চাঙড় আটকাতে লোহার খাঁচা লাগাতে হয়েছে।’’

এতো গেল চাঙড় খসে পড়া আটকাতে সতর্কমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু বৃষ্টি আটকাবে কী ভাবে? নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে এক কর্মী বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে আগে বারান্দায় দাঁড়াতাম। এখন গোটা বারান্দা জুড়ে ঝরঝর করে বৃষ্টির জল পড়ে। অফিসের মধ্যে ও খোলা আকাশের মধ্যে বিশেষ কোনও তফাৎ থাকে না। প্লাস্টিক দিয়ে খাতাপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথি ঢেকে রাখতে হয়। না হলে ভিজে একসা হয়ে যাবে। জল পেয়ে অফিসের সাতটি কম্পিউটারের মধ্যে চলতি বর্ষায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে তিনটি কম্পিউটার।’’

এখানেই শেষ নয়। দফতরের ভিতরে টেবিলের কাছে, আলমারির পাশে বিভিন্ন জায়গায় জল ধরতে বালতিও পাততে হয় কর্মীদের। তাতেও রক্ষা নেই। এক কর্মীর কথায়, ‘‘গোটা ঘর জুড়েই তো জল পড়ে। কত জায়গায় বালতি রাখব? নিম্নচাপ হলে অফিস জল থইথই করে। বৃষ্টির জল বাইরে বের করতে সরু নালাও কাটাতে হয়েছে কর্মীদের। এ দিকে, লোকপ্রসার প্রকল্পের হাজার-হাজার শিল্পীর আবেদন জমে রয়েছে দফতরে। বৃষ্টির মধ্যে সে সব বাঁচাতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্মীরা।

জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক উৎপল পাল বলেন, ‘‘আমাদের নতুন অফিস তৈরির কাজ চলছে। সেখানে অফিস স্থানান্তর করার পরে সব সমস্যা মিটে যাবে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা প্রশাসনিক ভবনের উল্টোদিকে চার তলা বাড়ির নির্মাণ কাজ বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ভবনের উদ্বোধনও করেছেন। তা হলে সেখানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে না কেন? উৎপলবাবু বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কাজ বাকি রয়েছে।’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ের আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই ওই দফতরের নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন