বাঁকুড়াতেই বৃষ্টি ১৮৪.৪ মিমি

পুরুলিয়ায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিতে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে রেহাই পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০১:৩৫
Share:

যন্ত্রণা: পুরুলিয়ার বাসস্ট্যান্ড। ছবি: সুজিত মাহাতো।

বর্ষা ক’দিন আগে রাজ্যে ঢুকলেও বৃষ্টিকে সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজল রাঢ়বঙ্গের দু’জেলা।

Advertisement

জেলা আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বাঁকুড়ায় ১৮৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুরুলিয়ায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিতে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে রেহাই পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন মানুষ।

Advertisement

বজ্রাঘাতে মৃত্যু

তুমুল বৃষ্টি দেখে লোকজন যখন স্বস্তি পেয়ে খুশি হচ্ছিলেন, সেই সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। সোমবার রাতে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার চরগালি গ্রামে বাজ পড়ে মারা যান তরুণকান্তি মাহাতো (৩৮)। ওই যুবকের বাড়িতে তখন বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। রাতে কয়েকজন মিলে গ্রামের পুকুরে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ই বৃষ্টির মধ্যে বাজ পড়লে ওই যুবক সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে আসা যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।

জমল জল

রাতভর বৃষ্টিতে বাঁকুড়া শহরের কিছু এলাকায় জল জমার অভিযোগ উঠেছে। ফিডার রোড এলাকায় জল জমায় সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। তবে শহরের অন্যান্য এলাকায় জল জমার সমস্যা হয়নি বলেই দাবি করেছেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “ফিডাররোড এলাকায় কিছুটা জল জমেছিল। তবে দমকল বাহিনী এসে জল বের করে দেয়। এ ছাড়া শহরের কোথাও জল জমার সমস্যা হয়নি।” তবে বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া প্রভৃতি বাসস্ট্যান্ডে এ দিন জলকাদায় জেরাবার বন যাত্রীরা।


জল-ছবি: রাতভর বৃষ্টিতে জেগে ওঠা গন্ধেশ্বরী নদীর জলে মাঠ ধরার ব্যস্ততা বাঁকুড়ার সতীঘাটে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বিকিকিনিতে মন্দা

মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে ঝালদায়। গৃহস্থালীর জিনিসপত্রের সঙ্গে গবাদি পশুও বিক্রি হয় হাটে। হাটে কাড়া বেচতে ঝালদার নয়াডি থেকে এসেছিলেন সুধীর মাহাতো, ঝালদা ২ ব্লকের নরকপি থেকে আসেন অখিল মাহাতো। কিন্তু বৃষ্টিতে তেমন খদ্দেরের দেখাই পেলেন না তাঁরা। শেষে কাড়া নিয়ে বাড়িমুখো হলেন তাঁরা। এ দিন সাপ্তাহিক হাট বসে বলরামপুরেও। তবে বৃষ্টিতে সেখানকার হাটে তেমন প্রভাব পড়েনি। হাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সকালের দিকে বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়তেই বৃষ্টি উধাও। আকাশের মুখ ভার থাকলেও আর বৃষ্টি না হওয়ায় হাটে আসা মানুষজন কেনাবেচার কাজ করেছেন স্বস্তিতে।

ক্ষতি নেই

বাঁকুড়া শহর ও সংলগ্ন এলাকায় রাতভর ভারী বৃষ্টি হলেও জেলার সর্বত্রই যে তেমনটা হয়েছে, তা মানতে নারাজ কৃষি দফতর। এই বৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালীন আনাজ কিছুটা সতেজ হলেও বীজতলার জন্য আরও বৃষ্টি দরকার বলেই জানাচ্ছেন জেলা উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বেরা। আশিসবাবু বলেন, “বাঁকুড়া শহরে ভাল বৃষ্টি হলেও দক্ষিণ বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর মহকুমার সর্বত্র বৃষ্টির পরিমাণ খুব একটা ভাল নয়। এমনকী এই বৃষ্টিতে মাঠে কাদাও সে ভাবে হবে না। ফলে বীজতলাও সম্ভব নয়।” তাই আরও বর্ষণ দরকার বলেই জানাচ্ছেন তিনি।


বিষ্ণুপুরে স্কুলের পথে ছোটরা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

হাজিরা কম

রাতভর বৃষ্টির জন্য মঙ্গলবার একজন পড়ুয়ারও দেখা মিলল না কাশীপুরের নারায়ণগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের শিক্ষক নন্দদুলাল গোস্বামীর কথায়, ‘‘আমরা যথারীতি অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কোনও পড়ুয়ারই দেখা নেই। বাধ্য হয়ে ছুটি দিতে হল।’’ বৃষ্টির জেরে এ দিন বাঁকুড়ারও প্রায় সব স্কুলেই পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল কম। বাঁকুড়া জেলা স্কুলে এ দিন ছাত্রদের উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন মগরা হাইস্কুলেও মাত্র ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিল।

যাত্রী কই

পুরুলিয়া জেলার আধিকাংশ এলাকায় মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি থেমে গেলেও প্রভাব পড়ে সড়ক পরিবহণে। সকালের দিকে কার্যত ফাঁকাই ছিল রাস্তাঘাট। তাই নামমাত্র যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন রুটের বাস ছুটেছে। অনেক রুটে বেশ কিছু বাস বন্ধও করে দেওয়া হয়। জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, যাত্রী কম থাকায় বিভিন্ন রুটে বাস কম চালানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন