অনাস্থায় হার প্রধানের, তরজা শুরু তৃণমূলেই

বরাবাজারের বান্দোয়ান-বানজোড়া পঞ্চায়েতের ছায়া পড়ল মানবাজারের বিসরি পঞ্চায়েতে। দলেরই পাল্টা গোষ্ঠীর আনা অনাস্থায় শুক্রবার সরতে হল তৃণমূলেরই প্রধানকে। অনাস্থায় সমর্থন জানালেন সিপিএমের দুই সদস্যও। এর ফলে ৮-৫ ভোটে প্রধানকে সরতে হল। ফল ঘোষণার পরে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪২
Share:

বরাবাজারের বান্দোয়ান-বানজোড়া পঞ্চায়েতের ছায়া পড়ল মানবাজারের বিসরি পঞ্চায়েতে। দলেরই পাল্টা গোষ্ঠীর আনা অনাস্থায় শুক্রবার সরতে হল তৃণমূলেরই প্রধানকে। অনাস্থায় সমর্থন জানালেন সিপিএমের দুই সদস্যও। এর ফলে ৮-৫ ভোটে প্রধানকে সরতে হল। ফল ঘোষণার পরে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বরাবাজারের বান্দোয়ান-বানজোড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পাল্টা গোষ্ঠী দলেরই ক্ষমতাসীন প্রধানকে অপসারিত করে। এ দিন বিসরি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা নিয়ে তলবি সভা ছিল। এই পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৩টি। তৃণমূল ১১টি ও সিপিএম দু’টি আসন পেয়েছিল। তৃণমূলের সজ্জিতা বেসরা প্রধান ছিলেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিসরি পঞ্চায়েতের ছয় তৃণমূল সদস্য দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা চেয়ে বিডিও-র কাছে আবেদন জানান। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব এ দিন বলেন, “অনাস্থার পক্ষে ৮টি ও বিপক্ষে ৫টি ভোট পড়েছে। ক্ষমতাসীন প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় সোমবার উপপ্রধানের হাতে তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। কালীপুজোর আগেই নতুন প্রধান নির্বাচিত হবেন।”

তৃণমূলের বিসরি অঞ্চল নেতা দিলীপ বাউরি ও উপপ্রধান সুনীল মাহাতো দাবি করেন, “সিপিএমের আমলে যে সব ঠিকাদার এই পঞ্চায়েত থেকে একচেটিয়া কাজ পেতেন, তারাই কাজ পেয়ে যচ্ছিলেন। টেন্ডারের নামে প্রহসন হচ্ছিল। কোনও নিয়ম মানা হত না। পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা আনার দাবি জানিয়েছিলাম।” দলের একাংশের অভিযোগ, “প্রধানকে সামনে রেখে দলের এক জেলা নেতা এই সব অনৈতিক কাজ করছিলেন।”

Advertisement

ইতিপূর্বে ক্ষমতা প্রদর্শনের নামে দুই গোষ্ঠীই মানবাজারে মিছিল-পথসভা করে। দলবল-সহ জেলা নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দরবারও করেন। কিন্তু দুই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা নেতৃত্ব ব্যর্থ। পুজোর আগে মানবাজারের ধানাড়া পঞ্চায়েতে অনাস্থা ছিল। জেলা নেতৃত্ব ধানাড়ার স্থানীয় নেতাদের অনাস্থা থেকে বিরত রাখতে পারলেও বিসরি পঞ্চায়েতে পারলেন না। তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ ছয় সদস্য এ দিন প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। প্রধানের পক্ষে পড়ে পাঁচটি ভোট। সিপিএম সমস্যেরা ভোটে অংশ না নিলেও এতেই সরে যেতে পারতেন প্রধান। কিন্তু সিপিএমের দুই সদস্যও যোগ দিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান।

ঘটনার কথা জানতে পেরে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ চৌধুরি বলেন, “আমাদের দলের দুই সদস্য কেন অনাস্থার ভোটে যোগ দিলেন, তা বুঝতে পারছি না। দলীয় স্তরে এ ব্যাপারে আলোচনা করব।”

তৃণমূলের জেলা নেতা দিলীপ পাত্র প্রধান অপসারণের ঘটনায় ব্লক ও জেলা নেতাদের একাংশের হাত দেখতে পেয়েছেন। দিলীপবাবু দাবি করেছেন, “মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিসরি অঞ্চলে দলের সংগঠন সব থেকে মজবুত ছিল। প্রধানকে সরানোর ঘটনায় স্থানীয় নেতা কর্মীদের ইন্ধন জুগিয়েছেন মানবাজারের এক ব্লক নেতা ও জেলার এক অন্যতম শীর্ষ নেতা। এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তাঁরা চক্রান্ত কষে প্রধানকে সরালেন।” জেলা নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আমি দুই গোষ্ঠীর মতভেদ দূর করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। তবে বাম আমলে এক সিপিএম নেতা যে সব অপকর্মের জন্য মানুষের নিন্দা কুড়িয়েছিলেন, খোঁজ নিয়ে দেখেছি দলেরই এক জেলা নেতা ক’বছরেই তার বহুগুণ অপকীর্তি করেছেন।”

রাজ্যজুড়ে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা প্রবাহে এমনিতেই দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপরে একটা পঞ্চায়েতের অনাস্থা নিয়ে দলেরই নেতাদের এই বাক্যবাণে আখেরে যে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে, তা মানছেন দলের কিছু নেতাও। দলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালি বলছেন, “বরাবাজার ও মানবাজারে পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন প্রধানকে সরানোর নামে দুই গোষ্ঠী যে ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছুঁড়ছেন, তা দলের পক্ষে ভাল নয়। অঞ্চল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে সংগঠনের সমস্যাগুলো কাটাতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন