বিশ্বভারতী

অমর্ত্যের সমর্থন নেই স্নাতক আসন সংরক্ষণে

স্নাতক আসনে সংরক্ষণ বা ‘কোটা’-র মাধ্যমে বিশ্বভারতীতে ভর্তির যে দাবি পাঠভবন, শিক্ষাসত্রের পড়ুয়া ও অভিভাবকরা তুলেছেন, তা নিয়ে ফের চিন্তা করা প্রয়োজন, বললেন অমর্ত্য সেন। শনিবার বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সমাজের বৃহত্তর লক্ষ্যও নজরে রাখা দরকার। ফলে ইঙ্গিত মিলল, বিশ্বভারতীর আসনের ৫০ শতাংশ ‘কোটা’ বহাল রাখার দাবিতে ওই দুই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং বিশ্বভারতীর শিক্ষক-কর্মীদের একাংশ যে আন্দোলন করছেন, অমর্ত্যবাবু তা সমর্থন করছেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৯
Share:

স্নাতক আসনে সংরক্ষণ বা ‘কোটা’-র মাধ্যমে বিশ্বভারতীতে ভর্তির যে দাবি পাঠভবন, শিক্ষাসত্রের পড়ুয়া ও অভিভাবকরা তুলেছেন, তা নিয়ে ফের চিন্তা করা প্রয়োজন, বললেন অমর্ত্য সেন। শনিবার বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সমাজের বৃহত্তর লক্ষ্যও নজরে রাখা দরকার। ফলে ইঙ্গিত মিলল, বিশ্বভারতীর আসনের ৫০ শতাংশ ‘কোটা’ বহাল রাখার দাবিতে ওই দুই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং বিশ্বভারতীর শিক্ষক-কর্মীদের একাংশ যে আন্দোলন করছেন, অমর্ত্যবাবু তা সমর্থন করছেন না।

Advertisement

এ দিন বিশ্বভারতীতে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ হাসপাতালের উদ্বোধন করে অমর্ত্যবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সন্ধান করতে চাইলে শুধু পড়ানোর ব্যবস্থা ভাল করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। সামাজিক কর্তব্য নিয়ে চিন্তাভাবনা বিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি জাগ্রত করার কাজটিও বিদ্যাচর্চার মধ্যেই পড়ে।” তিনি বলেন, কোন বিষয়গুলি বিশ্বভারতীর কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, এ নিয়ে আলোচনা শুধু কর্তৃপক্ষেরই কর্তব্য নয়। ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, অভিভাবকদেরও তা নিয়ে চিন্তার নিশ্চয়ই অবকাশ আছে। “সেই আলোচনা বর্জন করে, সমাজের বৃহত্তর কোনও লক্ষ্যের দিকে নজর না দিয়ে, আমরা যদি একমাত্র নিজেদের বাচ্চাদের পড়ার সুযোগ-সুবিধে কীসে হবে, কোটার সাহায্যে তার দিকেই নজর দিই, তা হলে তার মধ্যে চিন্তার খেলাপ আছে, এটা বলা যায়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টিহীনতা শুভকর নয়, মন্তব্য করেন তিনি।

অমর্ত্যবাবুর এই অবস্থান কার্যত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকেই সমর্থন করল। গত নভেম্বরে বিশ্বভারতীর শিক্ষা সমিতির বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হয়, পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের পড়ুয়াদের জন্য বিশ্বভারতীর স্নাতকস্তরের ৫০ শতাংশ আসনে সংরক্ষণ আর থাকবে না। অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ওই পড়ুয়াদের ভর্তি হতে হবে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ ভাবে আসন সংরক্ষণ বিধি-বহির্ভূত, যুক্তি দেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ফেব্রুয়ারিতে সমিতির পরবর্তী বৈঠকে ওই প্রস্তাব সমর্থিত হলে ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

Advertisement

এর পরেই ‘কোটা’ বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন পাঠভবন, শিক্ষাসত্রের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকরা এবং অধ্যাপক সভা, কর্মিসভার সদস্যরাও। ক্লাস বয়কট থেকে উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের কুশপুত্তলিকা দাহ, বাদ যায়নি কিছুই। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য-সহ বিশ্বভারতীর উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘেরাও করা হয়। প্রায় ২১ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের জেরে উপাচার্য ৭ পৌষ পৌষমেলার সূচনা অনুষ্ঠানগুলিতে যোগ দিতে পারেননি। বিশ্বভারতীর ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।

কেন ‘কোটা’ বহাল রাখার দাবি সমর্থন করছেন না অমর্ত্যবাবু? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কোনওটিতেই স্কুল থেকে কলেজে ভর্তির ‘কোটা’ রাখার প্রচলন নেই। “অনেক সময়ে কোনও কলেজ কিছু আসনে ভর্তির সময়ে বিশেষ কিছু প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। ওই কলেজের সঙ্গে যাঁদের দীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, তাঁদের জন্য এমন হতে পারে। কিন্তু তা বড়জোর শতকরা ২-৩ ভাগ আসনে। পঞ্চাশ শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নই নেই,” বলেন অমর্ত্যবাবু।

উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত এ দিন অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন থেকে বিজ্ঞানী সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়, পাঠভবনের ছাত্ররা বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে পাঠভবনের পড়ুয়া-অভিভাবকদের মধ্যে যেন আত্মপ্রত্যয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। তাঁদের একাংশ ছোট পরিসরে আবদ্ধ থাকার মধ্যে নিরাপত্তা খুঁজছেন। এতে পড়ুয়াদের বিকাশ এবং বিশ্বভারতীর পড়াশোনার মান, দুটিই ব্যহত হচ্ছে।” দুটি স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করলে বাইরের বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বঞ্চনা করা হয়। তাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বলেন সুশান্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন