কলাভবনের সেরামিক বিভাগের ছাত্রীর দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন নিলেন অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান গৌতম দাস। বৃহস্পতিবার সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “বিশ্বভারতীর ডিজাইন বিভাগের প্রধান গৌতম দাস বোলপুরের এসিজেএম বিচারক সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দারের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।”
সোমবার সেরামিকের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে ভয় দেখানো, মানসিক নির্যাতন, বেআইনি ভাবে আটকে রাখা এবং হুমকি দেওয়ার ধারা দিয়ে মামলা শুরু করেছিল। বুধবার ওই ছাত্রী দ্বিতীয় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তাতে গৌতমবাবু, কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জোর করে আটকে রাখা এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি। বোলপুর থানার আই সি দেবকুমার রায় বলেন, “দ্বিতীয় অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।”
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর মিডিয়া ইন্টারফেস কমিটির চেয়ারপার্সন সবুজকলি সেন একটি ই-মেল পাঠান সংবাদমাধ্যমের কাছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ওই ছাত্রীর সমস্ত অভিযোগই ‘ভিত্তিহীন।’ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সেরামিকের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর অভিযোগ, কলাভবনেরই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিশ্বভারতীর ভূমিকার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। মিছিলে সামিল হয়েছিলেন, সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্যও দিয়েছিলেন। এর জেরে গত রবিবার বিভাগীয় প্রধান গৌতম দাস ওই ছাত্রীকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। সোমবার এ বিষয়ে ওই ছাত্রী পুলিশে অভিযোগ করেন।
বুধবার ফের ওই ছাত্রী পুলিশকে জানান, তাঁর উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আনন্দসদন এবং শ্রীসদনের দুই ওয়ার্ডেনের চাপে তিনি বাধ্য হন কলাভবন যেতে। সেখানে কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশিরবাবু, গৌতমবাবু এবং ‘স্টুডেন্ট গ্রিভান্স রিড্রেসাল কমিটি’-র সদস্যরা ওই ছাত্রীকে বাধ্য করেন সাদা কাগজে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে। তিনি তা করতে বাধ্য হন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বোলপুর থানায় গিয়ে ওই ছাত্রী তাঁর অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেছেন বোলপুর থানার আইসি দেবকুমার রায় এবং ঘটনার তদন্তকারী অফিসার অমরজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে। তবে, এ দিন বিকেলে যাদবপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ মিছিলে তাঁকে সামিল হতে দেখা যায়নি। তাঁর সহপাঠীদের দাবি, রবিবার ও মঙ্গলবারের ঘটনার জেরে এতটাই আতঙ্কিত তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী, যে এ দিনের মিছিলে সামিল হননি। কলাভবনেও যাননি। থানা থেকে ফিরে নিজের ঘরেই ছিলেন। তবে ফোনে ওই ছাত্রী এ দিন বলেন, “কাল থেকে ক্লাস করব।”