বাস চালককে মারের প্রতিবাদ, দুর্ভোগ যাত্রীদের

আচমকা বাস ধর্মঘটে স্তব্ধ সিউড়ি

এক বাস চালককে মারধরের প্রতিবাদে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সমস্ত রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিলেন সিউড়ির বাসকর্মীরা। আর এই হঠাৎ ‘চাক্কা জ্যামে’র জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে চরম দুর্ভোগে পড়লেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাস কর্মীদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং বাস মালিকদের সংগঠন বৈঠকে বসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১২
Share:

চালককে মারধরের প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ সিউড়িতে।

এক বাস চালককে মারধরের প্রতিবাদে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সমস্ত রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিলেন সিউড়ির বাসকর্মীরা। আর এই হঠাৎ ‘চাক্কা জ্যামে’র জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে চরম দুর্ভোগে পড়লেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাস কর্মীদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং বাস মালিকদের সংগঠন বৈঠকে বসে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বাস কর্মীরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। যদিও বাসকর্মীদের হঁশিয়ারি, প্রশাসনের তরফে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করলে তাঁরা ফের আন্দোলনে নামবেন।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল?

বাস কর্মী সংগঠন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অবৈধ দখলদারির জন্য এমনিতেই সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বাস স্ট্যান্ড জুড়ে সার সার দিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দোকান। তার উপর নিয়ম করে জায়গা দখল করে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে বহু ভ্যান রিকশা। প্রশাসন সিউড়ি শহরে অবৈধ দখলদারী হঠাতে তৎপরতা দেখালেও এখনও পর্যন্ত সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডের চেহারা এতটুকুও বদল হয়নি। ফলে বাস দাঁড়ানো, যাত্রী ওঠা-নামার সমস্যা তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে বাস চালকেরা বাসগুলিকে ঘোরাতেও চরম সমস্যায় পড়েন। মঙ্গলবার সকালে সিউড়ি-আসানসোল রুটের একটি বাস স্ট্যান্ডে আসার পরে সেটিকে পার্কিং করার সময়ই ঘটনাটি ঘটে। বাস ঘোরাতে গিয়ে কোনও ভাবে এক মোটরবাইক আরোহীর চোট লেগে যায়। তবে, জখম বাইক আরোহীর কাছ থেকে প্রতিবাদ হয়নি। কিন্তু বাইক আরোহীর বদলে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা তিন ভ্যান রিকশা চালক ওই বাস চালককে মারধর করে বলে অভিযোগ। জখম বাস চালক শেখ আনার বলেন, “বাসের পিছনের চাকায় হাওয়া কমে যাওয়ায় পার্কিং করার সময় বাসটি পেছনের দিকে একটু বেশিই সরে গিয়েছিল। তাতেই আঘাত লাগে এক মোটরবাইক আরোহীর। তবে, আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বাস থামিয়ে ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বাইক আরোহী চলে যাওয়ার পর হঠাৎ-ই আমার উপর চড়াও হয় তিন ভ্যান চালক।” এ দিনই সিউড়ি থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের সঙ্গে অবশ্য এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।

Advertisement

বিপাকে যাত্রীরা।

এ দিকে, বাস চালককে মারধরের পরেই নিরাপত্তার দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বাস কর্মীরা। চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন বাস যাত্রীরা। ঘটনা শুধু সিউড়ি শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দুর্ভোগ পোহাতে হয় জেলার বিভিন্ন রুটের যাত্রীদেরও। আচমকা ধর্মঘটের কারণে জেলার বহু মানুষই বাস বিভ্রাটের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাটা আরও প্রকট হয় জেলার যে সব রুটে সরকারি বাস চলাচল করেনি। এমনিতে ২৩০টির মতো বাস প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিউড়িতে যাতায়াত করে। ফলে বাস চলাচল বন্ধ থাকলে অসুবিধা হবেই। বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাস যাত্রীদের অসুবিধার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু কর্মীরা আক্রান্ত হলে প্রতিবাদ তো হবেই। আমারা প্রশাসনের কাছে বাসস্ট্যান্ডকে দখল মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” প্রায় একই দাবি শ্রমিক সংগঠনগুলিরও। দু’টি বাসমালিক সমিতি এবং সিটু, আইএনটিইউসি, আইএনটিটিইউসি-সহ মোট ছ’টি শ্রমিক সংগঠনের মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অবিলম্বে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডকে অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে। বাস ঢোকা ও বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি ছোট গাড়ি, ভ্যান রিকশা বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে ঢোকানো যাবে না বলেও তারা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মী এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি ব্যবস্থার দাবিও উঠেছে। আজ, বুধবার সব সংগঠনের পক্ষ থেকে সমস্ত দাবিগুলি নিয়ে এসডিও-কে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের সম্পাদক, সভাপতিরা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) অরূন্ধতী ভৌমিক বলেন, “বিষয়টি আমার কানে এসেছে। জেলার সদর শহরকে অবৈধ দখল মুক্ত করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডকে দখল মুক্ত করতেও একই পদক্ষেপ করা হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন