নানুর

আবর্জনায় ভরা বাজার, মুখ ফেরাচ্ছেন বিক্রেতারা

নেই-এর তালিকা দীর্ঘ। আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। নেই শৌচাগার। এমনকী উদ্বৃত্ত সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই বিক্রেতারা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নানুর থেকে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে এক সময় যে সব সব্জি বিক্রেতারা ভিড় জমাতেন এই বাজারে, তাঁরা অনেকেই দীর্ঘদিন থেকে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই রকমারি সব্জির চাহিদাও মিটছে না ক্রেতাদের। এই নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেরই।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২২
Share:

যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের সামনে বসেছে বাজার। (ডান দিকে) নর্দমার মুখ মজে যাচ্ছে আবর্জনায়। নজর নেই প্রশাসনের। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

নেই-এর তালিকা দীর্ঘ। আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। নেই শৌচাগার। এমনকী উদ্বৃত্ত সব্জি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তাই বিক্রেতারা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নানুর থেকে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে এক সময় যে সব সব্জি বিক্রেতারা ভিড় জমাতেন এই বাজারে, তাঁরা অনেকেই দীর্ঘদিন থেকে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই রকমারি সব্জির চাহিদাও মিটছে না ক্রেতাদের। এই নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেরই।

Advertisement

গৌতম রায়, কেবির শেখরা বলেন, “প্রশাসন একটু উদ্যোদী হলেই এই সব্জি বাজার ঘিরে এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হত। রুটি-রুজির ব্যবস্থা হত অনেকের। কিন্তু পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন।” একই অভিযোগ ক্রেতা দেবাশিস মণ্ডল, মীর ফজলে করিম বলেন, “সকালে খোলা হাটে বাজার করতে আসি। কিন্তু বাজারের পরিবেশ আমাদের মন খারাপ করে দেয়। বেচাকেনা সেরে কত তাড়াতাড়ি বেরোতে পারব সে কথাই ভাবি দুর্গন্ধের চোটে।” ব্যবসায়ীরা বলেন, এখান থেকে হিমঘর কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার দূরে। তাই বেশিরভাগ সময়ই অবিক্রিত সব্জি নিয়ে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। সংরক্ষণের সুযোগের অভাবে অনেক সময় জলের দামে সব্জি বিক্রি করে দিতে হয়। নয় তো ফেলে দিতে হয়।

নানুরের এই সব্জি বাজার নিয়েও আরও অভিযোগ রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। ওই বাজারে দৈনিক সহস্রাধিক মানুষ আসেন। কিন্তু তাঁদের সারাক্ষণই নাকে রুমাল চাপা রাখতে হয়। কারণ বাজারের সব্জির পাতা, আর্বজনা ফেলার কোনও ডাস্টবিন নেই। নেই পরিষ্কারের ব্যবস্থাও। দিনের পর দিন ওই সব আর্বজনা ডাঁই করে রাখা হয় বাজার লাগোয়া একটি পুকুর পাড়ে। আর্বজনা পচে শুধু বাজারেরই নয়, লাগোয়া পুকুরটির দূষণ ঘটায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। অরুণ দাস, শেখ ফিরোজ বলেন, “প্রয়োজনে কিছু করে টাকা দিতে রাজি আছি। কিন্তু প্রশাসন আর্বজনা পরিষ্কারের দায়িত্বটা অন্তত নিক। না হলে সব্জি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ব।”

Advertisement

অভিযোগ আরও রয়েছে। সব্জি বাজারে কোনও শৌচাগার নেই। কাছাকাছি বলতে বেশ কিছুটা দূরে বাসস্ট্যান্ডে শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু সেখানে শৌচাগার এতই অপরিষ্কার তা ব্যবহারের অযোগ্য। শুধু সব্জি বাজারই নয়, লাগোয় মাছ বাজারের অবস্থাও একই। পরিষ্কার না করায় নর্দমা প্রায় মজে যেতে বসেছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, “আমরা বার বার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।” সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানুরের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। যে দল নিজেই সমস্যা জড়িত তার কাছ থেকে সমাধান আশা করাটাই ভুল।”

সংশ্লিষ্ট চণ্ডীদাস নানুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, “সমস্যার কথা বিষয়টি জানা ছিল না। একশো দিন কাজের প্রকল্পে ধারাবাহিক ভাবে যাতে এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, তা ব্যবস্থা করব।” একই বক্তব্য নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মধুসূদন পালেরও। তিনি বলেন, “সব্জি ও মাছ বাজারের উন্নয়নের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই নানা পরিকল্পনা নিয়েছি।” বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, “নানুরে কিষানমাণ্ডি তৈরি হচ্ছে। সেটি চালু হলেই বিক্রেতারা সেখানে সব্জি সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। কীর্ণাহারে তৈরি হচ্ছে সরকার পরিচালিত সব্জি বাজার। সেখানেও বিক্রেরাতা তাঁদের উদ্বৃত্ত সব্জি বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।”

কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-বীরভূম’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ, জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন