এ বার হস্টেল সুপারের বদলি রদের দাবিতে অবরোধ রাইপুরে

আগে হস্টেল সুপারকে বদলির দাবিতে পথ অবরোধ। আর এ বার বদলি রোখার দাবিতে। বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বাঁকুড়ার রাইপুরের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের। সম্প্রতি নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ওই মহিলা হস্টেলের সুপারকে মালদহের ইংলিশবাজার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসে বদলি করা হয়েছে। আর এই বদলির নির্দেশকে ঘিরেই শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৬
Share:

অবরোধে হস্টেলের আবাসিকেরা। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

আগে হস্টেল সুপারকে বদলির দাবিতে পথ অবরোধ। আর এ বার বদলি রোখার দাবিতে। বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বাঁকুড়ার রাইপুরের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের।

Advertisement

সম্প্রতি নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ওই মহিলা হস্টেলের সুপারকে মালদহের ইংলিশবাজার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসে বদলি করা হয়েছে। আর এই বদলির নির্দেশকে ঘিরেই শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। কিছু মহল সুপারকে রাইপুরের হস্টেল থেকে সরানোর জন্য তৎপর ছিল। আবার অন্য পক্ষ এই বদলির বিরোধিতায় সরব হয়েছে। সুপারকে বদলির দাবিতে গত শুক্রবার বারিকুল থানার চামটাবাদ মোড়ে, বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করেছিলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ সদস্যেরা। তার পাল্টা হিসাবে এই বদলির প্রতিবাদে সোমবার দিনভর রাইপুরের সাবস্টেশন মোড়ে, ওই রাজ্য সড়কই অবরোধ করলেন ওই হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের একাংশ।

এ দিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধের জেরে ব্যস্ত এই রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে। বহু গাড়ি ঘুরপথে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়। অবরোধস্থলে সকাল থেকেই রাইপুর থানার পুলিশ ছিল, কিন্তু তারা অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হয়। চার দিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য সড়কে দু’বার অবরোধের ফলে চরম নাকাল হলেন পথচারীরা। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের বাঁকুড়া জেলা প্রকল্প আধিকারিক স্বরূপ শিকদার বলেন, “ওই হস্টেল সুপারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ মেনেই সুপারকে অন্যত্র বদলি হয়ে যেতে হবে, বদলি রোধ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই।” পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত বিকেল ৫টায় অবরোধ উঠেছে। কেন আগে তোলা যায়নি? খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, “অবরোধ তোলার চেষ্টা হয়েছে। তবে, ছাত্রীরা তাতে সামিল হওয়ায় জোর খাটানো যায়নি।”

Advertisement

গত ২২ অগস্ট ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের নানা অব্যবস্থা নিয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল পরিচালিত রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আশা মণ্ডল হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। পরে হস্টেলের সুপার তাপসী দে-র বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কর্মাধ্যক্ষ। পরে ওই কর্মাধ্যক্ষ, কলেজের দুই ছাত্রছাত্রী সহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন হস্টেল সুপার। খাতড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনও পেয়েছেন তিনি। পরে রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস এবং হস্টেল সুপার একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর আবার ছাত্রীদের তরফে হস্টেলের এক ছাত্রী খাতড়া আদালতে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডল, রাইপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, টিএমসিপি নেতা চিরঞ্জিত মাহাতো, রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস-সহ পাঁচ জনের নামে একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনার জেরে শাসকদলের দুই গোষ্ঠী রাইপুরের দুই দাপুটে তৃণমূল নেতা জগবন্ধু মাহাতো ও অনিল মাহাতোর বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ে। ইতিমধ্যেই হস্টেল নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে আবাসিক ছাত্রীদের পাশাপাশি আদিবাসী সংগঠনও সরব হয়েছে। হস্টেল সুপারকে বদলির দাবিও ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর গত বৃহস্পতিবার সুপারকে ইংলিশবাজারে বদলির নির্দেশ জারি করে। ইংলিশবাজার কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের সুপার সোনা উপাধ্যায়কে রাইপুরের হস্টেলের সুপার পদে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এই বদলিরই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন হস্টেলের আবাসিকদের একাংশ। এ দিন অবরোধে সামিল হওয়া ছাত্রীদের বক্তব্য, “দীর্ঘদিন এই হস্টেলে সুপার ছিলেন না। বর্তমান সুপার আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছেন। আমাদের কোনও কাজে উনি বাধা দেননি। চক্রান্ত করে সুপারকে বদলি করা হয়েছে। এই বদলি রুখতেই আমরা আন্দোলনে সামিল হয়েছি।” সপ্তাহ খানেক আগেও হস্টেল থেকে বেরিয়ে ছাত্রীরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। হস্টেলে থাকাকালীন আবাসিক ছাত্রীরা যে ভাবে রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছেন, তা নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলের একাংশ এবং বদলি হওয়া সুপার ছাত্রীদের এই অবরোধে মদত জোগাচ্ছেন। এই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভও ছড়িয়েছে।

রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “হস্টেল সুপার থাকাকালীন যেভাবে আবাসিক ছাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছেন, তা পুরোপুরি নিয়মবিরুদ্ধ। গোটা বিষয়টি জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিককে জানানো হয়েছে।” হস্টেল সুপার তাপসী দে-র অবশ্য দাবি, “আবাসিক ছাত্রীরা হস্টেল থেকে বেরনোর সময় লিখিত ভাবে জানিয়েছিল যে, তারা কলেজে বা টিউশনি পড়তে যাচ্ছে। এর পর ওরা কোথায় গিয়েছে, আমি জানি না।” সুপার জানান, নতুন সুপার কাজে যোগ দিলেই তিনি হস্টেল ছাড়বেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন